দুইপাতা পত্রিকা ।। ১০১তম সংখ্যা ।। জুন-২০২৫



 দুইপাতা পত্রিকা ১০১তম সংখ্যা ।। জুন-২০২৫

১০০তম সংখ্যা পর্যন্ত যাঁরা ১০টির বেশি সংখ্যায় লিখেছেন তাঁদের লেখা এই সংখ্যায় প্রকাশিত হল। এই সংখ্যায় যাঁদের লেখা প্রকাশিত হল প্রত্যেকেই 'দুইপাতা' সম্মাননায় সম্মানিত হবেন। যথা সময়ে আপনার সম্মাননা পত্র পেয়ে যাবেন। সকল কবি লেখক বন্ধুকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা জানাই।

দুইপাতা পত্রিকা

============================

হায়,২৫ বৈশাখ

তরুণ মুখোপাধ্যায়

 

রবি ঠাকুর আসবে যখন

        ভাবি কোথায় দেবো গো ঠাঁই?

আমাদের এই হৃৎকমলে

        কোথাও কিছু শুচিতা নেই।

মর্ত্যলোকে যে মাধুরী

         দিলেন তিনি ,তুলনা কী পাই?

স্বর্গ দেখি অবাক মানে

         আমরা তা পেয়েও হারাই।

 

পূজার ছলে নিত্য ভুলি তাঁকে-

আত্মশ্লাঘা স্মরণপথ ঢাকে।



বসন্ত আমার

হরপ্রসাদ সাহু

 

যতবার তুমি চোখে চোখ রেখে

হেসেছিলে, সৌজন্য-চর্চিত; ততবারই

বসন্ত-বাতাস বয়েছিল আমার ভিতরে।

 

যতবার আমি ফেসবুক কিংবা ইনস্ট্রাগ্রামে

তোমাকে দেখেছি সবুজ পাতার মতো, ততবারই

অশোক-পলাশ-কৃষ্ণচূড়া ফুটেছিল আমার ভিতরে।

 

কথায় কথায় যতবার তুমি

কথার বাইরে নিয়ে গেছ আমাকে, ততবারই

নতুন পাতায় ভরে উঠেছে দুঃখদীর্ণ আমার কবিতা।

 

যতবার তোমার গান শুনেছি নির্জনে ততবারই

আমার দখিন দুয়ার খুলে গেছে, উদাসীন

এক পাখি হয়ে তোমাকে দেখেছি, তুমি অনন্যা-অধরা।

 

বস্তুত আমার ভুলো মন বলে তুমি বারংবার

আমার ভিতরে জাগিয়ে দিয়েছ বসন্ত, ফাগুন-চৈত্র নয়

সারা জীবনের যে-কোনো সময়ই বসন্তআসে, যায়।



প্রকাশ দুঃখরবিবাবুতোমাকেও

সৌমিত বসু


অতনুকে মনে পড়েঅতনুকেরোগালম্বাক্লাস 

সিক্সে অমলের পার্ট করেছিল । 

দেখলেই মনে হতো পড়ে গিয়ে মাথা ঘুরে যাবে । 

পেছনের বেঞ্চ থেকে চুল ধরে টানলেও বিরক্ত হতো না । 

খেলার চেয়ে মাঠের পাশে বসে চিৎকার

 করাতেই ছিলো তার আনন্দ । 

যেদিন খেলার পর অমলের পার্ট না  পাওয়া

 হিংসারা স্কুলের দেয়ালে কাদা দিয়ে

 লিখেছিলো 

'রাতে অতনু সুধার সাথে কি করে?' অতনু

 কেঁদেছিল । 

গুমরে গুমরে ওঠা সেই কান্নাস্তব্ধ ক'রে

 দিয়েছিলো আমাদের । 

আমরা বুঝিনি। অতনুও কি বুঝেছিলোঅতটুকু

 দিনে বোঝা যায়

রাতে অতনুর সাথে কি কি 'রে উঠতে পারে

 দুধের সুধাআধো আধো বুলি মুখে নিয়ে

 আন্তরিক সুধা ।

রবীন্দ্রনাথ ,আজ তোমার এক

ন্মদিনে 'ডাকঘরনাটকের 

আগে দিনের সেই ছেলেখেলা লেখা নিয়ে

 অপরাধ মেনে নিতে চাই।

সুধাপারলে তুমিও ক্ষমা কোরো।



প্রথম চুম্বন

তৈমুর খান


ও চুম্বন ,

বিশ্বাসের নদী পেরিয়ে

জাগরণের রাত্রি পেরিয়ে

চলে যাচ্ছি দূরে

শিহরনের ফুল ফুটছে

আমার শরীরে

পাপড়িঠোঁটে কী বিস্ময় আলো

স্বপ্নের ভ্রমর এসে

আমার হৃদয়ে গান রেখে গেল


সমস্ত সময় ধরে প্রেমের প্রবাহ

তোমারই স্পর্শে বেজে ওঠে

 সে এক ভাষাহীন অনুভূতি

সে এক ভাষাহীন দাহ!



অনাড়ম্বর জন্মদিন

সুধাংশুরঞ্জন সাহা

 

মহাসঙ্কটে আজ আমরা গৃহবন্দি।

আকাশে বাতাসে শোকের আবহ।

আনন্দ নেই কোন মনেই।

সান্ত্বনা নেই কোথাও।

বিপদের এই সময়েরবিঠাকুর

তোমার কাছেই নতজানু হইচোখ বুজি।

মনে মনে উচ্চারণ করি তোমার কবিতাগান।

ফিরে পেতে চাই হারানো আত্মবিশ্বাস

বেঁচে থাকার অমোঘ চাবিকাঠি।

অনাড়ম্বর জন্মদিনে তোমাকে আমার প্রণাম।


আশিস মিশ্র

পাঁজর ভেঙে বইছে হাওয়া উল্টো দিকে

এমনি হয়,যখন তুমি মুখ ফেরালে

কোথায় যাবো জানাবো না হে যমুনা নারী

ডুকরে কাঁদো ভিজিয়ে রেখো শীতলপাটি

আর কখনো আসবো না হে, এই আনাড়ি..

                        ২

পাখির মতো উড়তে থাকে একটি জবা

এ গাছ সে গাছ পেরিয়ে চলে নিরুদ্দেশে

যাকে তুমি ম্যাজিক ভাবো বাস্তবতায়।

কলম থেকে বেরিয়ে গেলে প্রাণের বায়ু

আর হলো না তেমন লেখা  সম্ভবত।


হে আদম সন্তান

আবু রাইহান


অগণিত জীবমন্ডলীতে ভরা বিস্ময়কর এই পৃথিবী এখন কত প্রাচীন

অথচ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সূচনালগ্নে তুমি ছাড়া সবকিছুই ছিল অস্তিত্বহীন !

 জল থেকে জীবনআর নূর থেকে সৃষ্টি করলে আজ্ঞাবহ ফেরেশতা

তবুও আমরা মানুষ কেন যে অহরহ হারিয়ে ফেলছি তোমার প্রতি আস্থা!

পৃথিবী নামক গ্রহতে আমাদেরকেই করেছ তোমার দায়িত্বশীল প্রতিনিধি

নিশ্চিত জানি আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত তোমার কাছেই ফিরে যেতে হবে

এটাই তো যাপিত জীবনের অমোঘ সত্য,মহাকালের অনতিক্রম্য বিধি!

স্বর্গের অকল্পনীয় সুখেও পিতা আদমের বেড়ে যাচ্ছিল প্রবল একাকীত্ব

মা হাওয়াকে জীবনসঙ্গী হিসাবে সৃষ্টি করে স্মরণ করালে তোমার মহত্ব!

হায় প্ৰিয় সঙ্গিনী নারী,রমণীয় ভালোবাসার মোহময় গিরিখাদ

তোমার নির্দেশ ভুলে কেন যে নিলাম নিষিদ্ধ ফলের আস্বাদ!

হারিয়ে ফেললাম দুটি বিশুদ্ধ প্রাণের স্বর্গীয় ভালোবাসার মগ্নতা  

লজ্জা বিষয়ে সচকিত হয়ে পাতা দিয়ে ঢাকলাম আশরীরী নগ্নতা!

অবাধ্য হয়েও শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে ইবলিসের মতো হতে চাইনি উপমা

তাই নিজেদের ভুলের জন্যে নতজানু হয়ে তোমার কাছে চাইলাম ক্ষমা!

তোমার মহৎ ক্ষমায় জনহীন পৃথিবীতে একাএকা আমরা হলাম অবতীর্ণ

হাজার বছরের নিঃসঙ্গ পথচলা শেষে তুমি আবার মিলনে করলে উত্তীর্ণ!

তোমার প্রতি গভীর বিশ্বাসে মাটির পৃথিবীতে ড়ে উঠলো মায়ার সংসার

আমাদের পরিশ্রমলব্ধ কষ্টকর জীবনে সন্তানেরাই

তোমার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার!

জীবনের শেষ লগ্নে জান্নাতি ফলের স্বাদ পেতে চাইলো পিতা আদমের মন 

মা হওয়া বুঝলেন এ জীবন সমাসন্নতাই মৃত্যুর ফেরেশতাদের আগমন!

এখনো সময় আছেশেষ হয়ে যায়নি তোমার মহৎ ক্ষমার উদার আহ্বান 

অনন্তকালের যাপিত জীবনের জন্যএখনই নতজানু হও হে আদম সন্তান!


ব্রহ্মাণ্ডের মতো সীমাহীন

অমিত কাশ‍্যপ

 

ছাদের কার্নিসে এসে ঝুঁকে থাকে রোদ

তখন ভোরের সঙ্গে শিউলির গন্ধ

মা ভোরে স্নান সেরে সূর্য প্রণাম করেন

পবিত্র বাতাসে আশ্বিনের সে এক আকাশ

 

মা বলতেন, স্থির বলে কিছু নেই, ওই যে দূরের গাছ

লেগে আছে সকালের রোদ, বেলা বাড়ার সঙ্গে

রূপময়তায় ভরে যাবে তা, তেমনই

মনকেমন করা বিকেল, সন্ধে হাজির হবে শুদ্ধতা নিয়ে

 

জীবন মৃত্যু পযর্ন্ত সীমাবদ্ধ জেনেও আমরা  কেমন আনন্দ করি

আনন্দের কোনো শেষ নেই, অনন্ত আকাশ দেখ আমাদের চাহিদার মতো, ব্রহ্মাণ্ড যেমন সীমাহীন

মা এখন ব্রহ্মাণ্ডে ভেসে যাচ্ছেন....


নীলকন্ঠ তোমাকে চাই

অশোককুমার মিশ্র


ভেবেছিলাম বিষহীন ঢোঁড়ার আস্ফালন

প্রথম ধাক্কার পর তোমাকে নিয়ে হেসেছি

হঠাৎ মনে হলো সমুদ্র মন্থনের সব বিষ

বাতাসে ভাসছে। বোঝার আগেই প্রিয় দাদাবাবু

বন্দীত্বের অসুখে বিদায় নিল

 একদিন খেলাম তোমার ছোবল

সোডিয়াম ক্ষয়এর  যন্ত্রণা লুকোতে নার্সিং হোমে

বাড়ির সবাই কে ছুঁয়েছতাদের রেখে

সপ্তাহ পর ঘরে ফেরাচারপাশ বিষে নীল

হে নীলকন্ঠ !পৃথিবী মন্থনের বিষহর।


শুভকামনা

শঙ্খশুভ্র পাত্র

 

নাপারি না এইসময়ে ছন্দে কোনও ভুবন স্পৃহা ৷

প্রিয়জনের মুখগুলি যে চোখের তারায় দীপ্র,উজল

জীবন মানেই সজলতা,স্মৃতির ভিতর লুকলুকানি

গ্রাম্যকথায় ঝেঁপে এল একপশলা অঝোরশ্রাবণ

এই আছে-নেই বুকের পাখিথমথমে এই বাতাসপুরী

আর কতোদিন সইতে হবে— বইতে হবে যন্ত্রণাভার

বিয়োগ-ব্যথায় মন ভারাতুরমুখোশ-আঁটা বন্দিজীবন

'পাশে আছিকিন্তু কোথায় কথায়-কথায় বিপদসেতু

পার হয়ে যাই দিন-রাত্তির ৷ সূর্য ওঠেপরিক্রমা...

অনুতাপে দগ্ধ-আয়ুসব ভালো হোক ৷ শুভকামনা...



প্রবাহ


অরবিন্দ সরকার

 

শুধু আলোর প্রবাহ বয়ে যায়

তিমির নীচে জড়ানো আমাদের পাওনা দেনা

শুধু প্রবাহ নেমে যায় গভীরে

সূক্ষ্মতন্তু ভেদ করে

প্রেমহীনতা থেকে প্রেমের প্রস্রবনে

 

তুচ্ছতা প্রলাপে জীবন ছুটে যায় অনন্ত প্রবাহে

দুঃখ দানীতে ভরা আছে

ছোট ছোট সুখ ফুল

নিবানো চোখে হঠাৎ আলোর ফুলকি

 

এসোপরিবেশন করি শুধু আলো

সার সার বসে আছে অনেকক্ষন

প্রবাহ ছুটে যায় অনন্ত ছন্দে

এসো পা ফেলিহাত ধরি পরস্পর ।


ধুলো মাখে আত্মার আলেখ্য

বিকাশ চন্দ


হঠাৎ ধমনী ছিঁড়ে ছিটকে এসেছিল হৃদপিণ্ড বুকের বাইরে

তখন সকল চরাচর ঘিরে ভেজা ভেজা প্রকৃতি আশ্রয়

মাঝ রাত জানে শেকড়ে শরীরে বেঁচে ছিল রাত প্রহর

মায়া শরীর গিলেছিল অসহ্য ঠোঁটের চুম্বন

ভেসে যাচ্ছিল সকল দিগন্ত চতুর্দিকে

গঙ্গার দূষণের মতো মদ গন্ধী জীবন

দিব্যি ভেসে যাচ্ছে উচ্ছ্বাস উৎসব

ভাসিয়ে দিচ্ছে যা কিছু বিসর্জনের মতো

 

খাবলে খুবলে তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছিল বাতিল শরীর কিছু

আঁচড়ে কামড়ে অদ্ভুত চোখে দেখছিল কিছু জিঘাংসু প্রাণী

যাদু জীবনের কিশলয় ঢেকে দিচ্ছে মায়া গোলক

তুলতুলে শরীর দেখে চোখে মুখে কয়েকটি মানুষ শ্বাপদ হয়ে গেল

 

একা একা কোজাগরী মাঠ পাহারায় ক্ষিদের সুষমা

বাধ্য বুকের বাঁধনে বাঁচে আত্মার উৎসব জানে পূর্ণ শশী

গ্রাম শহরের এমনই রাতে জাগে অরণ্যের রঙ্গভূমি

অসময়ে গার্হস্থ্য ধুলো মাখে আত্মার আলেখ্য.....


মৃত্যুঞ্জয়

দুরন্ত বিজলী

 

এখন অন্ধকার মৃত্যুভয়,

এখানে জীবন সংকটময়,

বেঁচে ওঠার বার্তা নিয়ে

আজও তুমি মৃত্যুঞ্জয়।

 

চারপাশে স্পর্শভয়

মনের মধ্যে -- কী হয়কীহয় !

মুক্তির মন্ত্র নিয়ে তুমি

আজও আমাদের বরাভয়।   


 

পরিস্থিতির জন্য 

 মালা ঘোষ (মিত্র)

 

কবিতা এক গভীর নির্যাস

জীবনকথন হয়ে গভীর বাস্তবতায় ডুবে যায়।

বাতাসে বাতাসে বিষাদের সুর

কেমন যেন গন্ধআচ্ছন্ন করে।

বিষাক্ত করছে শরীর ও মনকে

নাছোড় হয়ে মিশে থাকে।

বৃষ্টির রাত মুষলধারা

তছনছ করে আটপৌরে পরিপাট্য।

নিশ্চিতভাবে জানিয়ে যায় রাত জাগা রাত

আমার হবে না সে আর কোনও দিন

নীল আলোকবর্ষ দূরত্বে

তারারাও কাঁপছে,

শব্দহীন সত্য ঝরে পড়ে নিঃশব্দে

ফোঁটা ফোঁটা শিশিরের মতন।

মৃত্যুময় এক জগৎ তৈরি হয়।


আমার রবীন্দ্রনাথ

বিধানেন্দু পুরকাইত


সবখানে তুমি আঁচড় কাটলে

পাহাড় থেকে নদী

রমণী হৃদয় তছনছ করো

একলা হয়েছে যদি।

কাব্য চাষীর বুকের ওপর

ধরলে পাথর চেপে

যেদিকে তাকায় তুমিই আছো

নতুন যখনই খোঁজে।

 

প্রেম কোলাহল কিংবা বিষাদ

প্রতিটাই অনুভব

তোমার দখলে নিয়েছ।


দলিত স্মৃতির উজান

খুকু ভূঞ্যা

 

সব কথা কি বলতে আছে?

প্রথম শাড়ি পরা রোদে কে কাকে পুড়িয়েছে?

 

তবুও যে হাড়ের ভেতর রুয়ে দেয় যন্ত্রণা

তাকে ভেবে স্মৃতি ময়দানে নামিয়ে বাদশা চাঁদ

আজ রাতে বৃষ্টি হবে খুব

আজ রাত রক্তাক্ত হবে নিজের হৃৎপিণ্ড কাটতে কাটতে

উপেক্ষাও মন্দির হয়ে যায়

 

সে ডাকেনি কোনোদিন কৃষ্ণকলি

অবজ্ঞার ভারী বুট থেঁতলে দিয়েছে কুয়াশা মেয়ের ভোর

আশ্চর্য, সব ক্ষত আজ সোনা হয়ে গেছে অমর অক্ষরে ....


বেহালা পাখি

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

চাওয়া ও পাওয়ার মাঝে একটা পাখি থাকে,

হলুদ বেহালা পাখি

যে কেবল উড়ে বেড়ায় আকাশের পঙক্তিমালায়

নীল ডানায় মাখে নিঃশব্দ প্রহরে রোদের তাপ

 

আমি কেবল শীতল বাতাস

অথবা  বৃষ্টিবনের শব্দ

সুখসুখ নদী শরীরে পীড়ন আঁকতে থাকে এঁটেল মাটি

ভেঙ্গে দেয় পাড়, ঢুকে পড়ে বোধন, ঈশ্বরী...


জাতির বিবেকে টনক নাড়ানো বুলবুল

মৌ মধুবন্তী 

 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে “বিদ্রোহী কবি” 

আধুনিক বাংলা গানের  “বুলবুল” তুমি ।

তুমি সাহিত্যিক তুমি গীতিকার

তুমি কাব্যিক কবিতার সুরকার 

তোমার প্রতিভার পতাকা ওড়ে 

বাংলার জাতীয় কবিতার আকাশে

 

কেউ কি জানে তোমার কি দর্শন 

ও কাব্য ভাবনাধ্যান ও ধারণা

যখন তুমি ব্যাভিচারের বিরুদ্ধে 

হুংকার ছাড়োলোকে বলে

তুমি বিদ্রোহীতুমি কিছুই মান্য করো না 

জাতপাতধর্মীয়গোঁড়ামি

অস্পর্শকাতরের বিরুদ্ধে করেছ

বিদ্রোহ গেয়ে সাম্যের গান 

তুমি যুগবাণীলিখেছ অনেক কবিতা

নারীকে নিয়ে । তুমি ডানপিটে ছেলে

মোয়ায় ভোলানো কথায় তোমার 

ছিল না কোন আস্থা তুমি সমাজে 

সাম্যের জন্য গান করতে চেয়েছিলে 

নতুন ব্যবস্থা 

তুমি- “চল রে চলউর্ধ গগনে 

বাজে মাদল”-ঝড়ের  আদল

তুমি মানোনি  বেত পেটানো

শিক্ষা ব্যবস্থাশিক্ষকের সেসব

ধমক-ধামকনিষ্ঠুরতা ।তাই

তোমাকে বোঝেনি  শিক্ষক

বোঝেনি সমাজবোঝেনি

কেউ তোমাকে আজো বোঝে না 

 কে তুমি এসেছিলে এই মায়ার

 ধরণীতেরবীন্দ্রনাথের পরে 

বিশ্ব ধরণীকে নতুন করে 

কাঁপিয়ে দিতে। তোমার প্রেম

পরাগ মাখা সাহিত্য চরিতে

আমরা অবুঝেরা আজো 

খুলি হাল,তুলি পাল”-করে 

বেয়ে যাচ্ছি  নজরুল চর্চার দাঁড়

চারদিকে অসংখ্য গোপাল ভাঁড়

তাই বলি ভালাবাসার বন্দর থেকে 

তুমি অনন্য অসাধারণ কারবালা নজরুল

তুমি জাতির বিবেকে টনক নাড়ানো বুলবুল।


ক্ষত 

প্রশান্তশেখর ভৌমিক

 

যে কোনো গভীর সম্পর্ক জানে

ভেতর টলে গেলে 

মেরামত করা মুশকিল 

তবুও নাছোড় মন 

বারংবার করে আবেদন 

প্রলেপ দেয় ক্ষতের অন্দরে

জোড়া লাগে আষ্টেপৃষ্ঠে 

শুধু রয়ে যায় 

ক্ষত-চিহ্ন  !


ভাস্কর সেই পাথরটি

মহুয়া ব্যানার্জী

 

চন্দ্রাহত হয়ে ছিলাম বহুযুগ -

খাজুরাহের প্রস্তরীভূত সময় থেকে 

কয়েক ফোঁটা সজল  আকাঙ্খায় 

বার বার ফিরে দেখা অপ্সরা জীবন। 

হাতুড়ি ছেনির আঘাতে ভাঙনমুখের শরীর-

তোমার আঙুলে গড়ে ওঠে নিয়তি নির্দেশ-

এবার তবে সময় হল তোমাকে

তোমার মত করে ভাবার-

যাওয়ার প্রয়োজন নেই কোথাও

জানি মরণ তো লুকিয়ে আছে 

তোমার দু বাহুর আলিঙ্গনে-

এতদিন কেন যে বুঝিনি!


বিপ্লব ক্লান্তিতে

সুমিতা মুখোপাধ্যায়

 

মগজের পোকাগুলো সূচীপত্র খোঁজে,

প্রেমগন্ধ ---

যদি থাকে শরীরের আনাচে কানাচে,

চলভাষ চাপা পড়েছিল বালিশের ভিড়ে

কালঘুম হাতছানি দিয়ে ডাকে 

বিপ্লব --- তোকে কত কথা

মদের ঘোরে বলেছি কাল রাতে

তা বলে কি প্রেম দিবি না ?

বিপ্লব --- কত সহজেই

ছুঁড়ে ফেলে দিলি কালো তালিকার অজানায় 


ধ্রুপদি রস

পুষ্প সাঁতরা

অনুরাগ- বিরাগ বাড়ে দিন দিন
মমতার কোমল ছোঁয়া
মাতৃভাষার কোল খানি তাই
সিঁদুর শাখা নোয়া।
ভাষার সৃজনে ঝরে গেছে
অমূল্য শহীদদের রক্ত
ভাষা নগরের অমৃত পানে
বাংলাভাষা উন্মুক্ত।
একুশে ফেব্রুয়ারি বা উনিশে মে
রক্ত ঝরা দু'দিবস
জীবন দিয়েছে সীমানা ছাড়েনি
পেলাম
 ধ্রুপদি রস।


ভাষাই ইতিহাস 

গোবিন্দ বারিক 

 

উঠোনের ধূলো নিয়ে খেলেছি অনেক

ঘাসফুল তুলসিমঞ্চ লতাপাতা বিস্ময়

ভাষার অন্ধকার দিগন্ত ডিঙিয়ে 

ওপারের কাছাকাছি হেঁটেছি --- এই তো

কাঁটাতার, সবুজ মানুষের আনাগোনা 

 

আমি বরাবর এঁকেছি ভাষা-বসন্ত পলাশে

নিজস্ব কথা-আলপনায় বেঁধেছি ঘর 

মাতৃভাষার নদী, নক্ষত্র-ইশারা নাব্য আকাশ 

নিঃশব্দে মায়ের আঁচল গুলঞ্চলতা

 

ধানশীষের মতো বাংলা ভাষা চষা হয় মিডিয়ামে

অপভ্রংশ শরীরী-ভাষা ঠুকরে খাচ্ছে কেউ কেউ 

অবলীলায় বলী হচ্ছে মাতৃভাষা, অথচ ভাষাই

সংগ্রামের হাতিয়ার,ভাষাই রাষ্ট্র-স্বাধীনতার ইতিহাস .....


একটা ভাঙাচোরা ক্যানভাস

দীপক জানা

 

কষ্টে জুড়ছেতার পেরেকে

ভাঁজ পড়েছে যদিও

রঙ ঢেলে দিচ্ছে কেউ কেউ

দখলদারির নতুন চরে

 

অজস্র রঙ দস্যু

অযুত নখর থাবায়

ছবি হয়না

হিজিবিজি আঁচড় যন্ত্রনা

সহসা বিস্ময় সত্য-সুন্দরের সেই মুখ-রবীন্দ্রনাথ!


পাতা বদল

কবিতা সামন্ত

 

গাংধারা মাছের মতো

সূচ হয়ে যাচ্ছে রাতের আলো!

কাটা পড়ছে কাঁচের মতো

স্বচ্ছ সহজ জীবনের ধারাপাত।

 

সময়ের সমন্বয়ে আলোচনার থেকে

সমালোচনার মানুষ বেশি।

 

এইযে ধরো বছর শেষের শোক নাকি স্ফূর্তি!

এখানে ম্রিয়মাণ আলোলিকা

অদূর গাঁ থেকেও যেন মুছে যায়!

 

অর্ধেক রাতে জন্ম নিচ্ছে অজানা ভবিষ্যৎ।


একুশে

নীলোৎপল জানা


আমি আজ গর্বিত এক বাঙালি


কারণ আমি বাংলা ভাষায় কথা বলি।


বুক চিতিয়ে বলতে পারি আমার ভাষা বাংলা।

অনুরাগ,ভালোবাসা মাখানো  মাতৃষভাষা আমার মা,


একদিন তরতাজা কত প্রাণ চলেগেছে  পরিবার ছেড়ে


তাদের রক্ত এখনো শুকোয়নি; একুশের পতাকায় লেগে আছে……


আজ যে ভাষায় গর্ব করি  সে ভাষা লাঞ্ছিত


যত সব শয়তানের দল চক্রান্ত করছে মাতৃভাষার গলা টিপে ধরতে


আমরা সেই ভাষার প্রহরী হয়ে  দাঁড়িয়ে থাকবো রক্তাক্ত পতাকা হাতে মায়ের সম্মানার্থে। 

-==================

Fb  তে সংখ্যাটির বিষয়ে কিছু লিখুন plz

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ