বিশ্ব কবিতা দিবসে 'দুইপাতা'পত্রিকার ৯৭ তম সংখ্যার নিবেদন

 


দুইপাতা 

৯৭ তম সংখ্যা,২০২৫ 

বিশ্ব কবিতা দিবস

=============================

মায়া বৌ

সৌমিত বসু


যতবার ডাক দিই

খই মুখে তারা এসে সামনে দাঁড়ায়,

রাস্তাময় সিকি আধুলি ।

নিচুমুখে তা কুড়িয়ে

হাসিমুখে উঠে দাঁড়ায় যে বালক

তার কাছে মৃত্যু মানে আনন্দ প্রবাহ ।

 

খই উড়ছে শোকের বাতাসে ।

শব্দহীন মানুষেরা ধীরে ধীরে মৃত্যু অভিমুখী|

 

যতবার ডাক দিই

পাখিগুলো উড়ে আসে আগুনের মাঝে,

কান্না দিয়ে সাজানো আগুন ।

 

নীরবতা

সুধাংশুরঞ্জন সাহা

 

পৃথিবী এখন গভীর সংকটে।

চারিদিকে শুধু চিৎকার ...

বিকট শব্দের প্রতিযোগিতা সর্বত্র।

এখন চাই শুধুই নীরবতা।

 নীরবতা এক উপাসনা। নিঃশর্ত প্রশ্রয়।

নীরবতার শক্তি অসীম।

নীরবতা কি কোনো অনাবিস্কৃত উপমহাদেশ?

নাকি মহাকাশের কোনো অচেনা গ্রাম!

যেখানে আছে সীমাহীন জলাশয়, অরণ্য আর পশুপাখি

কিন্তু কোনো গুমঘর নেই, নেই অন্ধকার।


সময়ের গ্রাস

রাজীব ঘাঁটী

 

সময়ের বিষক্রিয়া গ্রাস করছে অক্সিজেন

আগলে রেখেছি নিজের সঞ্চয়ের শ্বাসবায়ু

একদিন এভাবেই শেষ হবে প্রয়োজনীয় সব

হাহাকার শুরু হবার আগেই বাঁধ দিতে হবে।

 

কতটা ছাই চাপা আছে আগুনে দেখে নিই

ভস্মীভূত হয়েছে খারাপের মিশ্রণে ভালোও

সময় আগলে রাখছে সভ্যতার অবয়ব

বসন্তেরর গলি বেয়ে ফাগুন এসেছে আজ।

 

হিসাব ক্রমশ গরমিল হয়ে যাচ্ছে,এই সময়

তাহলে কি বদলে যাবে বেঁচে থাকার সংজ্ঞা।।

 

কত কথা কত স্বর

বিকাশ চন্দ

 

কত অক্ষরের গায়ে কত জন্ম রক্তের দাগ

দুহাত ছড়িয়ে মহাশূন্য ছুঁতে চাই

কোথায় কত দূরে ছড়িয়ে কত যাত্রাপথ

গল্প কথার মত জড়িয়ে ধরি মানুষ

টেনে নিয়ে যায় খরস্রোতা সময় অচেনা পত্রালাপ

 

দিন পেরিয়ে কতবার ঘিরে ধরে মৌন রাত

শব্দহীন সময়ে জলের ছন্দে নাচে জোয়ার

প্রতিটি জন্মের শিকড়ে মূলে কত কথা কত স্বর

বিষাক্ত ক্ষত মুছে জাগে হৃদয় কথা

সকল মানচিত্র ছুঁয়ে আমাদের অক্ষর বরণ


মুকুট ও টোপর

অমিত কাশ‍্যপ

 

রোদ দিয়ে এস, একটু গল্প দিয়ে এস

সাজিয়ে সাজিয়ে একটা শহর কেমন প্রাণ পায়

চৈত্র যেমন আছে থাক না

গ্রীষ্মকাল একটা শ্রেষ্ঠ কাল

বসন্তের জন্য বিলাপ কর না

 

বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী, ভেবে নাও এখন কত

শপিং মল শহরের আনাচকানাচে

শহরের নকশায় এখন বিনোদন প্রক্রিয়া

দু'দণ্ড কাটিয়ে নাও, দু'দণ্ড বিকেল ফেলে এস

ওই যে দূরত্বে রাঙা বিকেল ভেসে যাচ্ছে

 

গঙ্গার ধার ধরে কত মানুষ এমনি এমনি

বাঁশিওয়ালার পাশে বসে আছে, বসে আছে

একলা শুকতারাটি আড়াল নিয়ে সময়ের

মুকুট টোপর জানে জলের গভীরের কথা

স্মৃতি জানে কত দুঃখের পাশে সুখ বসে

 

বৈতরণীর পারে

দীপঙ্কর নায়েক

 

আসে প্রেম গন্ধরাজের সুগন্ধ নিয়ে,

কখনো তা মনের বাগান থেকে ,

কখনো কখনো শ্রাবণ অশ্রু ধারায় , আবার কখনো বসন্ত শ্বাসে।

মন শুধু তাকেই খোঁজে, ছিলো যে মনের গহনে…

 

ভালোবাসটা হোক লতার মতো

আসবে ঝড়, ছাড়বে না কেউ কারোয়

পড়লে গাছ ওকে জড়িয়েই পড়বে

লতার গায়ের আঘাত বাঁচাতে নিজের ডালের আড়াল করবে সে ।

 

ভালোবাসটা এতটাই পূর্ণ হোক, যাতে -

অন্য কারোর ছায়ারও সেখানে প্রয়োজন না হয় ।

 

পরিভ্রমণ

শ্যামল রক্ষিত

 

ছি বলতে নেই

বুকের গভীর থেকে তুলতে নেই আকাশ

মঞ্চ দখল করেই ছুঁড়তে হয় বোমা

 

যেদিক থেকে দেখো

মূর্তিগুলো মাথা সোজা করে হাঁটতে জানে না

মৃত্যুর গণ্ডি পেরিয়ে যেদিকে বাঁক নিক

রাস্তার মোড়ে পাহারা দিচ্ছে যথেচ্ছাচারের বিজ্ঞাপন

 

নিরপেক্ষতার কোনো সদর দরজা হয় না

সর্বনামের জোচ্চোরেরা উপনিবেশের কায়দাকানুন নিয়ে আয়েশ করে বসে আছে

উত্তরাধিকারের বিছানায়

 

আহা, রাত্রির কথা কেউ মনে রাখছি না

অরণ্যের পথ সমাপ্তি করে হরিণেরা ফিরে যাচ্ছে বাড়ি

ভদ্রলোকদের সময়-অসময় নেই, পথ অবরোধ করে হাঙ্গামা বাধাচ্ছে ।


কেন এলাম

শান্তনু ভট্টাচার্য

 

কোথাও এসে পড়ার পর মনে হয় -কেন এলাম

নিমন্ত্রণের কার্ড ছিল ঠিকই

তবু তো কেউ জোর করেনি-যে এখানে আসতেই হবে

বারবার এসে পরার পর মনে হয় কেন এলাম?

 

রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে হাঁটা শুরু করেছি

হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে গেছি কত কাঁটাতার

তোমার জন্য পকেটে যে চিঠিটা রেখেছিলাম

সেটা  ভিজে গেছে ঘামে

অক্ষরগুলো কালির রঙের সাথে মিশে গেছে কাগজে

এখন বোঝার উপায় নেই

ঠিক কী লিখেছিলাম

তুমি চাওনি তবু ...

 

ঠিক যেভাবে কেউ ডাকুক না ডাকুক-- এসে যাই

আর তারপরই  মনে হয় কেন এলাম...

 

কবিতার অবক্ষয়

পার্থপ্রতিম চ্যাটার্জী

 

কবিতা আজ হারিয়ে কৌলিন্য সতত নত শির

কবিতা আজ হারিয়ে সম্মান হয়েছে ভগ্ন নীড়।

কবিতা আজ ভুলুন্ঠিত হয়ে হারিয়েছে তার মান

কবিতা আজ সংকীর্ণতা ধারায় নিত্য করে স্নান।

কবিতা আজ নিমকি সিঙ্গাড়ায় বিকিয়েছে মাথা

কবিতা আজ স্মারকের লোভে খোলে পেন খাতা।

কবিতা আজ চেটেপুটে খায় ক্ষমতার পদধূলি

কবিতা আজ শিরদাঁড়া হীন তৈলমর্দনের বুলি।

কবিতা আজ হারিয়েছে তার প্রতিবাদের ভাষা

কবিতা আজ হিসেব করে খোঁজে সুখের বাসা।

কবিতা আজ দলাদলির ফাঁদে হারিয়েছে দাম

কবিতা আজ পদলেহনে ঝরায় অমূল্য ঘাম।

কবিতা আজ বিভাজনের সুশানিত হাতিয়ার

কবিতা আজ অমানবিকতার গোপন বিস্তার।

কবিতা আজ লোভ লালসার জালে চরম অবক্ষয়

কবিতা আজ ক্ষমতা অর্থের কাছে মেনেছে পরাজয়।

 

দূরত্ব 

শিখা মল্লিক


ভাবি না যে তা নয় !

প্রতিদিন ভোরের সাথে সাথে।

উঠতে বসতে যখনই মনে পড়ে

এক দীর্ঘশ্বাস ! কেন ভুলের সাগরে

নিজেকে জড়াল ! বদনামে ছেয়ে গেল

সমস্ত অলিগলি।

 

তারপর নিশ্চয়ই সেই পথে পড়বে না

অপেক্ষার ছায়া।

এইভাবে দূরত্ব

ক্রমাগত দূরত্ব মনের আঙিনায়।

 

পূর্ণ হয়ে উঠবে

অরবিন্দ সরকার

 

পৃথিবীর সমস্ত আয়না ধ্বংস প্রাপ্ত হোক

তবেই  লাবণ্য ফুটে উঠবে

দেহে গজাবে সৌন্দর্য কুসুম

মুঠো মুঠো খ্যাতি পাবে

চতুর্দিকে সোহাগ সর ছড়াবে

আর তখনই ভালোবাসার ঢেউয়ে ঢেউয়ে

পূর্ণ হয়ে উঠবে তুমি ।

 

অনুপ্রেরণা

সৌজন্যা মজুমদার রায়

 

পাহাড়টিকে সজোরে কেউ ধাক্কা দেয়নি বলে,

দূরে প্রবহমান নদীর বুকে সে নিমজ্জিত হতে পারেনি...

নিস্তরঙ্গ জলাশয়ে কেউ আঘাত দেয়নি বলে,

উথাল পাথাল ঢেউয়ের দোলায়

সে কখনো তরঙ্গায়িত হয়নি...

পাইন দেবদারুর ঝরে পড়া শুকনো পাতাকে,

আজন্ম গোপন রাখা মেঘ তার মনের কথা বলেনি,

তাই অভিমানে নৈঃশব্দে একাকী দাঁড়িয়ে গভীর অরণ্যানি ।

ধাক্কা পাওয়া, আঘাত লাগা, অভিমানী প্রেমিকরা...

হৃদয় কুটিরে না হোক,

কবিতার আঙিনায় আজীবন সফল।

 

তুমি

মহুয়া ব্যানার্জী

 

পাহাড়ের গায়ে মোহ আবেশ।

কিশোরী চাঁদ প্লাবিত করছে চরাচর-

সন্ধ্যারাগে সুর ওঠে তোমার নূপুরছন্দে

ভ্রু পল্লবে কবিতা তৈরি হয় সে সময়!

ঊষালগ্নে তোমার জেগে ওঠার ক্ষণে

আমার কাঙাল দৃষ্টিপাতে অক্ষর সাজে

খাতার পাতায় তখন গালিবের সাথে গল্পগুজব!

তোমার বিশ্ব সৃষ্টির কালে বেদনার সাগর পেরিয়ে

নতুন ভাবে কবিতা লেখা হয়...

তুমি হয়ত জানো না , কিন্তু আমরা সবাই জানি

তোমার প্রত্যেক মুহূর্ত এক একটা কবিতা দিবস!

 

অলংকার

সুমিতা মুখোপাধ্যায়

 

ক্রমশ নিশ্চিতভাবে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পথে

স্মৃতির ভেতরে খেলা করে সূর্যাস্ত ভোর সূর্যোদয়

শ্রীময়ী দুঃখের চিন্ময়ী শরীরে একে একে জমে ওঠে

অহংকারের শব্দময় বর্নালি দ্যুতি ও অলংকার

 

উপেক্ষিত মন্দিরের দীন ব্রাক্ষ্ণণের অল্মান দৈন্যের কাছে

বিনম্র হাত পেতে আছি জন্ম জন্মান্তর

দুঃখ আমাকে ফিরিয়ে দেয় অক্ষরের অনন্ত অহংকারে।

 

কবিতা

মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি

 

তোমাকে আমি নির্মাণ করেছি

আমার মনের মতো করে,

হৃদয়ের সবটুকু রঙ-রস আর রূপ দিয়ে।

কে কি ভাবল – কে কি বলল

কিছুমাত্র যায় আসে না তাতে;

তোমার মধ্য দিয়ে আমি আমার

সুন্দরকে তুলে ধরতে চেয়েছি,

সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি,

একের পর এক গড়ে গেছি ভালোবাসার ইমারত।

তোমাকে নির্মাণের মধ্য দিয়ে ধরে রাখতে

চেয়েছি আমার হাজার রাতের স্বপ্নকে,

দেখাতে চেয়েছি সূর্য ওঠা সকালকে,

বলতে চেয়েছি না বলা কথারও

একটা মানে আছে।

কল্পনার অলীক ছবি নও তুমি,

তুমি আমার সকল জ্ঞানের শ্বাস,

সকল ভাবের নির্যাস।

 

কবি জন্ম    

পাপড়ি ভট্টাচার্য

 

"সারা জীবন প্রেমের কবিতা লিখলেই

কবি হওয়া যায় না

লিখুন এমন কিছু যা আপনাকে

কবি সম্মান দেবে "

 

ভাবনায় পড়ে গেলাম  ,আমি তো জানি  মস্তিষ্কের কোষে আছে জ্ঞানের যোগ-

সঙ্গে নিশ্চয় হৃদয়ের যোগ  আছে

সেই যোগ প্রেম নয় কি ?

যে কাজে প্রেম নেই সে তো বন্ধ্যা

তা হলকর্ষণ হোক বা কবিতা লেখা

কাজের সাথে প্রাণের যোগ হল ভালোবাসা

মন প্রাণের যোগে জন্ম ,সুরভিত প্রেম  পুরস্কার সম্বর্ধনার কবি বন্দনা বিলাসে  কিছু কি আছে ?

অন্তর অগ্নির দাহ কবিতার আবাসভূমি ।

চলো খুঁজি তাকে

 

কবিতার রান্না ঘরে

উত্তম বেহারা

 

পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিক অভিযোগ  ভুলে গেলে

জিরাফের  মতো উঁচু চাউনিতে চেয়ে থাকে তোমার বাবা

যে কোনো দিন প্রতিবেশী বাজারে হাঁটেনি

 

আরো একটু সময় গেলে ন্যাংটো দেখে সবাই

তার পরেও বলি এ সমস্ত  অভিযোগ  তোমার কাছে ---

প্রকাশিত আর অপ্রকাশিত আমার কবিতা

 

আবার দেখা হবে

বৈদ‍্যনাথ ধাড়া

 

তুমি বৃষ্টিতে ভিজলে _

আকাশে জলছবি মনে হয়।

তুমি হাসলে স্বপ্ন মনে বাসা বাঁধে।

 

তোমার চলনভঙ্গি

কোন সে বনলতা, মনে নেই।

 তবুও _

তুমি চাইলেই উজাড় করতে পারি আমার হৃদয়।

অজানায় হারিয়ে যেতে পারি কোন এক বসন্তে।

শুধু জেনো,

যদি ভালোবাসি ফুল

আবার দেখা হবে।

 

ত্রিবেণীর ঘাট

তৌফিক জহুর (বাংলাদেশ)

 

ইড়া ও পিঙ্গলাকে অগ্রাহ্য করে

সুষম্না পথে হেঁটে যাই

যে পথে মিলন পরমাত্মার ডাকে জীবাত্মার

 

আগুনের তেজ কমিয়ে দুধ জ্বালে ক্ষীর

আমাবস্যা রাতে চন্দ্রোদয়ে

চোখে নেশা কলসভরা জল

 

ভাটির স্রোতধারায় গাঙ্গের ঢেউ

শুক্লপক্ষে চন্দ্রোদয়ের সাধনা সপ্তদিবসে

ইড়ার উজানস্রোতে সাঁতার কাটে মাছ

 

অমৃতের সাধনায় মজি দেহবৃক্ষে জলজবীজ

 

কবিতা নিজেই

রুমকী দত্ত

 

কবিতা নিজেই মহান সৃষ্টি সুগন্ধময় ধূপ

কবিতার প্রেমে মাতোয়ারা কবি স্নিগ্ধ মায়াবী রূপ।

কবিতা শক্তি কবিতা প্রেরণা কবিতা মনের ফুল

কবিতায় লিখি না বলা কথা ছন্দের বুলবুল ।

 

কবিতা আমার গ্রীষ্ম দুপুরে শীতলপাটির ছোঁয়া

কনকনে শীতে মিঠে রোদ্দুর উষ্ণ কফির ধোঁয়া ।

কবিতা আমার বর্ষাদিনে বৃষ্টি ভেজার গান

বসন্তকাল দখিন হাওয়ায় পলাশের অভিমান ।

 

কবিতা যেন পূর্ণিমা রাত জোছনায় মাখামাখি

ভোরের আকাশ ঊষার আলোয় ঘুম ভাঙানিয়া পাখি

কবিতা যেন অনন্ত সুখ সৃষ্টি উন্মাদনা

তপ্ত দুপুরে শিউলি পুকুরে খোকার দস্যিপনা ।

 

কবিতা মানে রবীন্দ্রনাথ সুকান্ত নজরুল

শঙ্খ সুনীল জীবনানন্দ তসলিমা আনিসুুল ।

কবিতা মানেই বাংলাভাষা বাঙালির গৌরব

কবিতা দিবসে বিশ্বজুড়ে কবিতার সৌরভ ।

 

কবিতায় বাঁচি কবিতায় মরি কবিতায় নিই শ্বাস

সঙ্কটকালে ভয়-ভীতি ভুলে কবিতায় বসবাস ।

কবিতা কাননে উৎসব এক, হাজার ফুলের মেলা

জীবন জুড়ে শিখে যাই শুধু কাব্যকূজন খেলা ।

 

আজকাল মানুষ

কৃষ্ণাংশু মাকুড়

 

আজকাল মানুষ বড্ড বেশি কথা বলে

আজকাল মানুষ অহেতুক কথা বলে

আজকাল মানুষ নিজের বুকে কান পাতার

কথা বলে না...

 

দীর্ঘদিন তারা কোন হারানো চাবির

পুরানো ডাকবাক্স খোলেনি

কতকাল কোঁচকানো পকেট হাতড়ে

খোঁজেনি হেমন্তের অপেক্ষমাণ বিকেল

কিংবা, গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নায় চাঁদের সহর্ষ মুখ

শেষ কবে শিহরিত শিশির ধুয়েছিল পায়

তা কারোর মনে নেই...

 

আসল কথা হল,

বহুকাল তারা কেউই এক ছটাক কবিতা পড়ে নি!


আলোর খোঁজে

প্রশান্তশেখর ভৌমিক

 

আজ কোন পথে হেঁটে চলেছি আমরা

চারিদিকে বিভৎস দৃশ্য

নগ্ন অন্ধকারের চাপা কান্না

এক অদৃশ্য হাহাকার

কন্যা হারা মায়ের চোখের জলে

আজ ভিজে আছে মাটি....

 

আমরা সবাই হেঁটে চলেছি

এক বিভৎস সময়ে

এই সময় কেউই ভালো নেই‌।

সমস্ত হাওয়ায় শুধু বিষ মিশে আছে

বলো! শেষ কবে তুমি

প্রাণভরে শ্বাস নিয়েছো ?

জানি এর উত্তর তোমারও জানা নেই‌....

 

এ এক গভীর অসুখ

অন্তহীন অনিশ্চিয়তার পথ

তুমি কবে এর থেকে আলো খুঁজে পাবে ?

নাকি এ ভাবেই হেঁটে যাবে

অন্তহীন গভীর অন্ধকারে।

ভেবে দেখো কোন পথে গেলে

পাবে তুমি আলোর সন্ধান।।

 

নকেলশ্বর মহাকাব্য

মৌ মধুবন্তী (টরন্টো, কানাডা)

 

আমি কিছু প্যাথোলজিকেল মিথ্যাবাদীকে জানি

সুকৌশলে তাদের সংশ্রব থেকে নিজেকে দূরে টেনে আনি

আমি কিছু চাটুকারকে বহুদিন ধরে লক্ষ্য করে যাচ্ছি

তাদের কানামাছি ভৌ দৌড়ের নষ্টামিকে থাপ্পড় মারছি

আমি কিছু অষ্টপ্রহর সুবিধাবাদীকে চিহ্নিত করতে পেরেছি

তাই তাদের চলার পথ থেকে নিজেকে স্বজ্ঞানে সরিয়ে নিয়েছি

আমি কিছু উদ্ভট পোশাকের কিরিঞ্জিবাজের মুখোমুখি হয়েছি

সত্যের সকল উপলব্ধি বুকে নিয়ে নিভৃতচারীর বাস নিয়েছি

একে একে নকলবাজ, ধান্ধাবাজ আর কৃত্রিম বন্ধুত্বের খোলস খুলে,

সবাইকে অন্যত্র চলতে দিয়ে নতুন পথ আমি গড়েছি

এ পথে আমি একা... কিন্তু আমি একলা নই

 নিরস্ত্র নই, নিরীহ নই

বিশ্বাস করুন আমার অর্থ নেই, বিত্ত নেই, নেই প্রাসাদগাছি

অথচ এক বিশাল মনকে নিয়ে পৃথিবী পরিভ্রমণ যাচ্ছি..

 

বাঁধা থাকে

মালা ঘোষ মিত্র

 

হলুদ পাতার গায়ে

কতটুকু ব্যর্থতা লেখা আছে।

ভুল পথে ঘুরে ঘুরে চেনাপথ হারিয়ে যায়

অনন্ত ইশারায় মোহ থেকে যায়,

শ্লোক বেঁধে রাখে নীলকন্ঠ পাখি

জ্যামিতিক সম্পাদ্যের রেখা মুছে যায়,

অপরাজিতার  লতা পাঁচিলে

নীলফুলে  ভরে আছে,

প্রজাপতি ছুঁয়ে যাচ্ছে শুঁড়

জন্ম জাল বাঁধা পড়ে।

 

সত্য ও সভ্যতার ইতিবৃত্ত

নবকুমার মাইতি

 

নিরস্তিত্বের মাঝে খুঁজে ফিরি

অস্তিত্বের সঙ্গম,প্রণয় সংগীত

বোধিবৃক্ষের ডালে বসে গান গায়

ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী, অন্তর্গত হৃদয়ের গান

ঘনঘোর অন্ধকার সরে গেলে

আরক্তিম সকালে সূর্যের হাসি কুড়িয়ে পাই

এগিয়ে যাওয়াই আমাদের অভীষ্ট

শতাব্দীর সঞ্চিত আবর্জনা ধুয়ে সাফ করে

পথ চলতে হবে সূর্যের সোনাঝরা রোদ্দুরে

কোন একদিন দেখা হবে সত্যের সাথে

সুদৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আমরা সম্মোহিত হই

সভ্যতার অলিন্দে সুন্দরের ফুল একদিন ফুটবেই

 

রঙকুনো কুটো কথারা  

দীপক জানা

 

রঙ কথায় চাঁদ ওঠে

চাঁদমামার সাথে সখ্যতা নেই জেনেও

গোলির মোড়ের শুয়োরের বাচ্চাটা সিটি দিল

তিনশো পঁচিশ ডিগ্রী ভ্যাবলা হয়ে বাদাম চিবুলাম

ঋত্বিকদার নাকি খুব কবিতা পায়

 

শুনেই লিয়াকৎদা ঢুকে পড়েছে একটা সিগারেটে

ধোঁয়া ধোঁয়া অন্তর্বাসের ভেতর মাখামাখি দোল

বড্ড পলাশ ফুটেছে তোর চোখে

বলতেই বরুণা রোদ্দুর হয়ে যায়

 

আচ্ছা হয় না হয়ে যায় কোন শব্দটা ঠিক হবে বলুন তো

ক্রমশ হয় শব্দে ঘোড়া ছোটে

টুসির মা গোলাপে জল দেয়, গোলাপি হয়

পূজাবৌদি আদিখ্যেতা দেখে

পুকুর ঘাটে নাইতে যাচ্ছে যুবতীরা

আমি তখনও কদম, কেস্টো, বাঁশি খুঁজে চলেছি

দোহাই, এখন অ্যালজেব্রার সূত্র বোলো না

অথবা ধর্ষ লাশ বালিকা

কেননা, এখন পলাশ লিখবো ভেবেছি ,

পূজা বৌদি, বরুণা, টুসির মা কিংবা আবির ;

এ সময় চোখটা একটু ডাইনে-বাঁয়ে ঘুরিয়ে নেওয়া যাক।

 

রঙ

নীলোৎপল জানা


কবিতা লিখবো বলে পলাশ খুঁজিনি 

ঠিক এই রঙ আর কোথাও পাওয়া যায় কি'না জানি না।

পলাশের রঙ আমার প্রিয় তাই খুঁজেছি শিলং থেকে শ্রীলঙ্কা

সব শেষে পেয়েছি তোমাতে।

মনে হয় সব রঙ মিলে মিশে একাকার তোমার ভালোবাসায়।


তুমি বসন্ত হয়ে এসো...

তুমি বর্ষা হয়ে এসো...

তুমি কখনো শরৎ হতেও পার!

আমি চিরদিন তোমার নুপুর হতে চাই।

====================================================
লাইক ও কমেন্ট করুন।এই ধরণের আরো পোষ্ট পেতে ফলো করে রাখুন।






 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ