রাজি
মৃণালকান্তি দাশ
পথিক মানে যদি ছোটবকুলপুরের
যাত্রী হয়, আমি রাজি-
সারি সারি গাছের শরীর
চোখ বন্ধ করে কানামাছি খেলছে,
তাদের পাতায়-পাতায় গতজন্মের আলো-
যদি ছুঁতে বলো, আমি রাজি ।
কতদিন নদী দেখিনি, জোয়ার-ভাটা দেখিনি,
সেই নদীর দিকে এক হিম সন্ধ্যাবেলা
তুমি হারিয়ে গিয়েছিলে-
তোমাকে খুঁজে আনার ভার
কেউ আমাকে দেয়নি,
যদি কোনদিন তুমি বাতাসের সুরে বলে
ওঠো,
আমি সত্যিই হারিয়ে গেছি,
ফিরিয়ে নাও আমাকে-
তোমার দিব্যি, আমি রাজি ।
সন্তোষকুমার মাজী
এত অন্ধকার জীবনে আসেনি
ক্রমে যেন নিকষকালো অন্ধকার গ্রাম করছে
জীবনে কত আলো ছিল আশা ছিল ভাষা ছিল
আকাশেও আলো নেই সব মুছে গেছে
মায়ের ত্রিনয়ণের স্তিমিত আলো
ভেসে উঠছে নাম জপের মধ্যে
হন্যে হয়ে খুঁজছি আলো জপতপের আলোড়নে
'হ্রিং' শব্দের প্রক্ষালনে
অন্ধকার সাঁতরে আলোয় ফিরতে চাই
বধ্য ভূমিতে
বিধানেন্দু পুরকাইত
দুর্গার মতো দশ হাতে নয়
দু’ হাতে করব বধ
যারা ধ্বংস করেছে তোমার আমার
যা কিছু সম্বল।
ভেঙে চুরমার নগ্ন শরীর
কুটিল মনের গ্লানি
সাজাবো তোমাকে দেবীর মতো
লেপে চন্দন আসমানী।
এসো তোমাকে ধ্বংসের কাছে
বধ্য ভূমিতে রাখি
দুর্গার মতো দশ হাতে নয়
দু’ হাতে ধ্বংস মাখি।
সুর
মালা ঘোষ মিত্র
সরে যায় অন্ধকার,
আহ্লাদে মন ভরে যায়।
পরিযায়ী স্বপ্নেরা ভিড় করে আসে
সবুজ শস্যক্ষেত, শালুক,পদ্ম-----
প্রকৃতিতে আলো করে থাকে----
ঢাকের তালে বুঁদ হয়ে থাকি
মুহূর্তেরা অন্তহীন হয়ে যায়।
ঈগলচক্ষুর মতো শিকড়ের সন্ধানে----
মেঘ থাকে আকাশে
বুনোহাঁস দল বেঁধে
সাদা কালো রঙে দিশেহারা
আলো এসে পড়ে এলাচের বনে।
এস্রাজের সুরে বাণভাসি মন
এবার শুধুই আলোয় ফেরা।
সমর্পণ
আনন্দমোহন দাস
একে একে সব তোমার পায়ের কাছে রাখি
আমার পাপ - পুণ্য
আমার জয় - পরাজয় ।
কপালের বলিরেখার অন্ধ কালি
মুছে দাও ...
কার্তিকের দীপ্র ঝিলের জলে
যে আলো খেলা করে, সেই আলো
তুলে নিই চোখে।
আমার ক্ষোভ - বিক্ষোভ
আমার বিষাদ - যন্ত্রণা
সব, সব তোমাকে দিলাম।
যেদিকে তোমার সুন্দর মন্দির, অফুরান
আলো
সে পথেই নদীর নিয়মে নামি বিশুদ্ধ
বোধের বিভায় ... ।
আলোয় আলোময়
উত্থানপদ বিজলী
আমরা সবাই আলোর পথের যাত্রি
চাই না কেহই নিকষ আঁধার রাত্রি
অন্ধকারে যতেক বিপদ আসে
দর্জনেরা ফন্দি করে , হাসে,,,,
আমরা কেন সুযোগ দেবো বলো !
করতে বিনাশ দল বেঁধে সব চলো
ঝোপে-ঝাড়ে কোথায় আছে ডেরা ?
চতুর্দিকের পথ যদি হয় ঘেরা।
দীপাবলির আলোয় আলোময়
কোথায় অসুর ? কোথায় থাকে ভয় !
আশা
শক্তিপদ পাঠক
একদিন সবকিছু ফিরে পাব।
নিকানো উঠানভরা ধানের মরাই,
কাগজিলেবুর গাছে শালিকের বাসা
আর খিড়কি পুকুর।
মাটি খুঁড়ে লুটে নেওয়া সোনার মোহর
ফিরে পাব।
গোয়ালে আবার কালো নতমুখী গাভীটির
নতুন বাছুর হবে।
কেন্নো, কেঁচো, হেলেসাপ এখানে ওখানে
ঘুরে
ফিরে এসে জীবনের কাহিনী শোনাবে।
ক'টাদিন কষ্ট করে দাঁতে দাঁত চেপে
বসে থাক।
বেড়া দাও চারপাশে, খড়িমাটি গিরিমাটি
গুলে
দেওয়ালে শিশুর মুখ আঁক।
এখন অশান্ত স্রোত শক্ত করে ধরে থাকো
হাল,
রাত ঠিক কেটে যাবে, আলো নিয়ে আসবে সকাল।
বিকাশ চন্দ
ক্ষণজন্মা সময় চেনে অন্ধের দিন রাত্রি
তবুও দু'চোখে বাঁচে কাঙ্ক্ষিত আলোর
ফসল
জন্মের থেকেও শুনেছি যতটুকু বরাদ্দ
কালো শরীরের সাদা সুধা আলোর স্বরূপে
দুচোখে খেলে আলোর তারা কালোর বিন্দুতে
জন্মের পরে যদি পুনর্জন্ম থাকেও
যেমন জড়িয়ে ক্ষুধা অন্ন জল অন্য সব
জীবনের ঘরে
ঘাস মাটি শস্য ফসলে বুনে যাচ্ছে আত্মার
ফুল
দু'চোখ কেবল খোঁজে সবার আলো মুখ
হতভাগ্য শরীরী জমিনে বরাদ্দ আজন্ম
শোক
অযোগ সময়ে কেউ কেউ আলো রঙে লেখে সুখ
অদৈব শব্দেরা বেপথু তারার আলোকে ঝোলে
আপনি খোঁজেন মানুষের সাথে মানুষের
অন্ত্যমিল
দু'চার পংক্তি কবিতা যদি প্রতিবাদী
হয়
সকল নগ্নতা ঢেকে দেবে মায়ের আত্মজীবনী
মেঘ সরে যাচ্ছে
শিখা মল্লিক
মেঘ সরে যাচ্ছে
একটু একটু করে আলো
এখন উঠোনে।
পাখিরা হয়নি দিগ্ ভ্রান্ত
ডানা মেলে ঘুরে এসে
আবারও নীড়ে।
কত কাজ কত কোলাহল নদীর গর্ভে
ছুটিয়ে নিয়ে যায় আবেগের স্রোত
সমুদ্র জড়িয়ে ধরে তুমুল উচ্ছ্বাসে
।
এখানেও কম নেই।
উৎসব পরিবেশ নিয়ে একান্ত হৃদয়
শুধু এসে রাঙিয়ে দাও অপেক্ষার প্রদীপ।
আলোয় ফেরা
পার্থপ্রতিম চ্যাটার্জী
মেঘ আর রোদের খেলা চলে নিরন্তর অবিরাম
কখনো জিতে মেঘ আবার কখনো রোদ।
মেঘ বিজয়ে প্রকৃতিতে পড়ে ছায়া
আর মেঘপুঞ্জকে পরাভূত করে
সৃষ্টির প্রকাশে আতপ প্রবাহে হয় আলোয়
ফেরা।
যেন ঠিক আমার কাছে তোমার উপস্থিতি।
তোমায় পেলে মেঘ যায় হেরে
মনের প্রাঙ্গণ ঝলমলিয়ে ওঠে
মুখে ফুটে ওঠে হাসির ঝলক।
আর তোমার বিহনে জিতে যায় মেঘ
ভার হয়ে থাকে মনের প্রতিটি কোন।
হাসিরা পথ হারিয়ে নিরুদ্দেশে যায়
যেন হাসি শব্দটা মনে হয় আমার অভিধানের
বাইরের অর্থহীন কোনো শব্দ।
তমশার জালকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে
ভালোবাসার বন্যায় হোক অবিরাম
প্রাপ্তি সুখের স্নিগ্ধ আলোয় ফেরা।
রোশনাই
গৌতম সমাজদার
মাসের পর মাস তমশায়
আজ চারিদিকে আলোর রোশনাই
সমস্ত অশুভ পরাজীত হয়ে
জয় আনে ঐ সাঁওতালি মেয়েটা
সাঁওতালি মেয়েটা, কালের প্রতিমা
সময় নিয়ে শরীরের খাঁজে খাঁজে
অজন্তা ইলোরার ভাস্কর্য,
ঐ দুলকি চালে পাহাড়ি পথে
বিহঙ্গের মতো উড়ে যাওয়া
অন্ধকার খড়কুটোর মত
উড়িয়ে দিয়ে আলোর খোঁজে
বাঁধা পড়লে হাতের অস্ত্র
ঝনঝনানিয়ে ওঠে,রক্ত পিপাসুরা তৈরি
চেটেপুটে তমশা কাটিয়ে
নতুন ভোর নতুন দিনের বার্তা।
দীপের উৎসবে প্রেমের আলো
মৌ মধুবন্তী
শীতের আগমনী বাতাসে দীপাবলির সন্ধ্যাটা
ছিল মোহময়। ছাদের উপর বসে ছিল পাঁচ বন্ধু— আর্য (হিন্দু), ফাহমিদা (মুসলিম), জনাথন
(খ্রিস্টান), সুখপ্রীত (শিখ) এবং ঈশা (বৌদ্ধ)। চারদিকে জ্বলে ওঠা প্রদীপের সারি, আলোর
রোশনাই আর পটকার মৃদু আওয়াজ এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি করেছিল।
আর্য হাত বাড়িয়ে ফাহমিদার হাত ছুঁলো,
"দেখছো, এই আলোর সারিগুলো যেন আমাদের সম্পর্কের মতোই, একে অপরের পাশে জ্বলে উঠেও
নিজস্বতা বজায় রেখেছে।" ফাহমিদা মুচকি হেসে বলল, "একেবারে ঠিক। দীপাবলির
এই আলো শুধু অন্ধকার দূর করার জন্য নয়, এটা যেন মানুষের ভেতরের শুভ শক্তিকে জাগিয়ে
তোলার প্রতীক। কুরআনেও আছে, আলোর একটা মহৎ অর্থ আছে।"
সুখপ্রীত বললেন, "আমাদের গুরুদ্বারেও
এই সময় বিশেষ প্রার্থনা হয়। দীপাবলি আমাদের কাছে বন্দী ছোড় দিবস। অন্ধকার থেকে মুক্তির
কথা, যা সব ধর্মের দর্শনেই আছে। আলো তো শুধু বাইরের নয়, মনের জ্ঞান ও সততার আলো। ওই
আলোতেই তো সব ধর্ম এক হয়ে যায়।"
ঈশা শান্তভাবে বললেন, "বুদ্ধের
শিক্ষাও একই। আমাদের ভেতরের অজ্ঞানতা, লোভ আর বিদ্বেষই হলো আসল অন্ধকার। এই উৎসব মনে
করিয়ে দেয় সেই অন্ধকারকে দূর করে প্রজ্ঞা এবং করুণার আলো জ্বালাতে হবে। আমরা সবাই
তো একই আলোর পথের যাত্রী।"
জনাথন মোমবাতির শিখার দিকে তাকিয়ে
বললেন, "খ্রিস্টীয় দর্শনেও 'আলো' হলো সত্য আর ঈশ্বরের উপস্থিতির প্রতীক। এই দীপাবলির
উৎসব প্রমাণ করে যে, মানবতা আর প্রেমের দর্শন সব ধর্মের মূল সুর। আমরা ভিন্ন পথে চলি,
কিন্তু আমাদের গন্তব্য ওই একই— শান্তি আর আলো।"
আলোচনা শেষে, আর্য আর ফাহমিদা একে
অপরের দিকে তাকিয়ে হাসল। তাদের চোখে দীপাবলির হাজার প্রদীপের চেয়েও উজ্জ্বল ছিল ভালোবাসার
স্নিগ্ধ আলো। তারা বুঝল, ধর্ম যাই হোক না কেন, উৎসবের মূল বার্তা প্রেম, আশা আর অন্ধকারকে
জয় করার সম্মিলিত অঙ্গীকার। ওই আলোয় তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হলো।
দীপঙ্কর নায়েক
অর্পিতার কাছে নবারুণ এক কবিতা। তার কথাগুলো মসৃণ, যেন সদ্য
ঝরে পড়া শিশির। "অর্পিতা, তোমার চোখ দুটোয় পুরো একটা আকাশ লুকিয়ে থাকে,"—এমন
হাজার উপমা নব’র কণ্ঠে যখন তখন ঝরে। তার কণ্ঠস্বরে জাদু, যার টানে অর্পিতা তার নিজের
সমস্ত দ্বিধা, সব সতর্কতা জলাঞ্জলি দিয়েছিল।
লোকে বলত, যার কথা এত সুন্দর, তার
মনও নিশ্চয়ই তেমনই। অর্পিতা বিশ্বাস করত, এটাই সেই "সবই সুন্দর" হওয়ার গল্প।
রূপকথার আয়ু বড় কম। তাদের সম্পর্কের প্রথম বর্ষপূর্তির ঠিক
দু'দিন আগে সেই মসৃণ কথার আবরণে ফাটল ধরে । অর্পিতা জানতে পারে , তার আকাশ-প্রেমিকটি
একই ধাঁচের কথার জাল বুনেছে আরও অনেকের জন্য। প্রতিটি প্রশংসার শব্দ, প্রতিটি ভালোবাসার
অঙ্গীকার—সবই ছিল শুধু এক সুন্দর কৌশল, এক নিখুঁত অভিনয়।
নবারুণ তার মুগ্ধ শ্রোতাদের থেকে শুধু
বাহবা নিত, কখনও কখনও সামান্য সুবিধা, আর যখনই তারা গভীর বন্ধন চাইত, সে সরে যেত।
সেদিন রাতে নবারুণ যখন ফোন করে বলল, "বিশ্বাস করো, তুমি
আমার কাছে অন্যরকম," অর্পিতার কানে সেই কথাগুলো আর মিষ্টি সুর হয়ে বাজল না। তা
মনে হল ফাঁপা, ঠুনকো। তার মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি শব্দ যেন এক-একটি ধারালো ছুরি
হয়ে অর্পিতার সরল বিশ্বাসকে কুপিয়ে গেল। সুন্দর কথার মোহে পড়ে সে ভুল মানুষকে ভালোবাসার
যে ভুল করেছে, তার যন্ত্রণা তীব্র।
অর্পিতা ফোন কেটে দেয়। নবারুণের সুন্দর, আপাত-নির্দোষ শব্দগুলো
আজ তার কাছে ঠকানোর হাতিয়ার ছাড়া আর কিছুই নয়। বাইরে তখন বৃষ্টি পড়ছে, আর অর্পিতার
ভেতরের সমস্ত রূপকথা ভিজে একসা হয়ে গলে যাচ্ছে। সে বুঝল, ব্যর্থ প্রেমের এই গল্পে কথা
সুন্দর হলেই মানুষ সুন্দর হয় না।
অনিন্দিতা সেন
তিতিরের কিচ্ছুটি ভালো লাগছেনা।প্রিয়
বান্ধবীর বিয়ে।একটাও ভালো শাড়ি নেই।এই নিয়ে তন্ময়ের সাথে একচোট হয়েছে।প্রেম করে পালিয়ে
বিয়ে বাপ মা মরা বেকার ছেলেকে, ভালো শাড়ি গয়নাতো বহুদূর,বাড়িভাড়া আর দুবেলা ভাতের জোগাড়
করতেই তন্ময়ের প্রাণ বেরিয়ে যায়। প্রাইভেট টিউশন পড়িয়ে যতোটা ভালো থাকা যায় আরকি।শুধু
একসাথে আছে, ওরা তাতেই খুব খুশি।তবুও......
মনখারাপ নিয়ে তিতির হাতের কাজ সেরে,বাক্সের
কাপড় ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগলো।বাবার দেওয়া দূর্গাপূজোর নকল কাতান,সরস্বতীপূজোর আর্টসিল্ক,পয়লা
বৈশাখের সস্তা জামদানি... কতো স্মৃতি কতো আদরের চিহ্ন ভাঁজে লেগে।কতোদিন বাবা মায়ের
সাথে যোগাযোগ নেই।ওর দোষতো ষোলোআনাই।হয়তো কখনও সব ঠিক হয়ে যাবে ভেবে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস
বেরিয়ে এলো বুক থেকে।কিন্তু বড়লোক বান্ধবীর বাড়িতে যায় কীভাবে?ভাবতে ভাবতে হঠাৎই মাথায়
এলো একটা আইডিয়া।
ওদের কাছে একটা হাতমেশিন ছিল।শাশুড়ির।সব
বেচলেও শেষমেশ তন্ময় ওটা বেচতে পারেনি,আছে এখনো সচল।মায়ের ভীষণ প্রিয় ছিল।তিতিরও টুকটাক
সেলাই পারে।
ম্যাজেন্টা সিল্কটা অর্ধেক কেটে ফিরোজা
জরিপাড় কাতানের অর্ধেকের সাথে জুড়ে দিলো।তন্ময় তো দেখে অবাক!
বিয়েবাড়িতে সবাই শাড়ির প্রশংসায় পঞ্চমুখ।অনেকেই
জানতে চায় কোথা থেকে কেনা?
তিতির জানায় " বুটিকের।কাস্টমাইজড।"
"তোমার বুটিক?"...."হু।
একদম নতুন খুলেছি।
নাম মেখলা"
এরপর হুড়োহুড়ি, মুখেমুখে ছড়িয়ে পড়ল
কথা।
প্রায় তিরিশটা অর্ডার নিয়ে তিতির সেরাতে
বাড়ি ফিরলো।অভাবনীয় আনন্দ গুনগুনিয়ে চলেছে
আজ ওদের চারপাশে।
সামনে কতো কাজ।বড়বাজার যেয়ে শাড়ি এনে
সবার মনের মতো শাড়ি বানাতে হবে।তারপর.....
সেদিন ঘুমিয়ে,স্বপ্নে তিতির দেখলো
একটা বিশাল বাড়ি,তার মধ্যে অগণিত শাড়ির ভীড়ে ও শুধু রঙ মেলাচ্ছে....একটার সাথে একটা।তৈরি
হচ্ছে একের পর এক অসাধারণ রঙমিলান্তি।সারা ঘর ভেসে যাচ্ছে এক অলৌকিক জোছনায়!
অকুতোভয়
পুষ্প সাঁতরা
ক'দিন ধরেই একনাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে;
থেমে যাওয়ার নামটি নেই। লতা বৌ বলে,'ওগো শুনছ,এ'রকম বৃষ্টি হলে ধানী জমি যে সব জলের
তলায় চলে যাবে কি হবে গো'? শুনে পলাশ চক্কোত্তি বলে,'এতো ভয় পেলে চলে,এখন আমাদের
অন্ধকার সময়,বিপদ ঠিক কেটে যাবে,তা যখন যা হবার হবে,তবে বিপদ আসার আগে প্রস্তুত থাকতে
হবে।এমন সময় পিকু আর টুকু স্কুল থেকে এসে বল্লে,'বাবা মাষ্টার মশায় তাড়াতাড়ি ছুটি
দিয়ে বললে,কাঁসাই নদীর অবস্থা ভাল নয়,জল অনেক উঁচু দিয়ে
বইছে'--'ভীষণ ভয় লাগছে আমাদের কি
হবে গো মা? পলাশ বলে ভয় পেলে চলে? ভয় করলে ভয় তো গিলে নেয় তাই ,সমস্যার সমাধান
করে আলো খুঁজতে হয়।পলাশদের বাড়ি কাঁসাই নদী থেকে কিছুটা দূরে।নদীর তীরে বাস ভাবনা
বারমাস!,পলাশের ভয় পেতে পেতে ভয় এখন অভ্যাসে
দাঁড়িয়েছে,আর ভয় লাগেনা বন্যাকে ।লতা বৌ বলে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না'।পলাশ
উঁচু ডাঙায় তালপাতা আর পলিথিনের ছাউনি তৈরি করে, সেখানে তক্তাবোশ রেখে বাড়ির দরকারি
জিনিস পত্তর ও তুলে দেয় --- ঐ দূর থেকে শোনা যাচ্ছে শাঁখের আওয়াজ, পলাশের বুকের ভিতর
ঢেঁকি পড়তে থাকে।তাহলে কি!
তেলের প্লাস্টিকের ড্রাম ,বোতল আর
দড়ি দিয়ে ভাসমান ডিঙি বানিয়ে ফেলে,বন্যা
হলে ভেসে থাকবে ডুববে না।তাই বিপদে ধৈর্য হারাতে নেই; যৌবনে দেখা শোলে ছবির সেই ডায়লগের
কথা মনে পড়ছে'যো ডর গিয়া তো ও মর গিয়া,তবে বন্যার আসার আগে বাস্তু ছেড়ে যাওয়া
চলবে না,বাস্তু হল শিকড় আর আলো ।ঐ শোনা যাচ্ছে মানুষের কোলাহল, জল ভাঙ্গার শব্দ তালপাতা
আর পলিথিনের ঘেরা ছাউনিতে বাচ্চা দুটিকে বসিয়ে দেয়,নিজেরা কলার মান্দাসে উঠে পড়ে।ভেলায়
তলায়ধাক্কা মারে জল,দুলে ওঠে শরীর! বাবারে--- তোরা ড্রাম ধরে থাক আমরা আছি ভয় নেই!
যিনি সমস্যা দিয়েছেন তিনিই সমাধান করে দিবেন,তিনি যে আলোর দেবী মা কে ডাক অন্ধকার
থেকে বেরোবই এ আমার বিশ্বাস! সাপ গুলো গাছ থেকে নেমে সরসর করে গায়ের কাছ দিয়ে চলে
গেল এখন জল মানুষ সাপ সব একাকার। অবশেষে তিনদিন পর জল নামল।পলাশ দেখে কেউ নেই ,সবাই বাস্তু ছেড়ে চলে গেছে।পলাশরাই যায় নি।'
দেখলে তো লতা বৌ,বিপদ এলে বিপদের সাথে যুজতে হয়,ছেড়ে যাওয়া মানে হেরে যাওয়া'ঐ দেখো
কাঁসাই নদীর পূব দিক থেকে সূর্য উঠছে------এখন জীবনের আঁধার কেটে আলো মাখছে পলাশের
পরিবার-------!
সুব্রত ভট্টাচার্য্য
বীথি যখন চলে গেছিল কৌস্তভের জীবন থেকে, কৌস্তভের
সামনে তখন ঘন অন্ধকার। কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না সে। আসলে কৌস্তুভ মনে প্রাণে
খুব ভালোবেসেছিল বীথিকে। সে চেয়েছিল তার হৃদয়ের সমস্ত সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো মিশিয়ে
যত্নে সাজিয়ে তুলবে তাদের আগামী ভবিষ্যৎ। কিন্তু শুধুমাত্র বড় চাকরি করার কারণে বীথি
পরাশরকে বেছে নেয়।
সে পরে জেনেছিল ভিতরে ভিতরে অনেকদিন ধরেই কথা
চলছিল দুই বাড়ির মধ্যে কিন্তু বীথি বুঝতে দেয়নি তাকে। যখন সমস্ত কথা পাকা, শুধুমাত্র
চার হাত এক করার অপেক্ষা তখন একদিন বীথি ফোন করে জানিয়েছিল যে তারপক্ষে এই সম্পর্ক
আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সে শেষবারের জন্য দেখাও করেনি কৌস্তভের সাথে।
এই ঘটনায় মনে মনে খুব ভেঙে পড়েছিল কৌস্তুভ।
ভেবেছিল তিলে তিলে নিজেকে শেষ ক'রে দেবে। সেই ভাবনায় সে অ্যালকোহলের নেশা শুরু করে।
শেষে এমন অবস্থা হয়েছিল সারাটাদিন সে অপেক্ষায় থাকতো কখন সন্ধ্যা হয়, আর সন্ধ্যা
হ'লেই শুরু হ'তো একের পর এক গেলাসের ঝংকার!
ছোটবেলার বন্ধু বুদ্ধ অনেকদিন লক্ষ্য ক'রে শেষে
বাধ্য হয়ে একদিন কৌস্তুভকে ডেকে বললো, "একটা পথ যেখানে শেষ হয়ে যায় সেখানে
সবসময় দেখতে পাবি দু'টো পথ। একটা অন্ধকারের একটা আলোয় ভরা। তুই অন্ধকারের পথটা কেন
বেছে নিচ্ছিস?… তোর গলায় সুর আছে। তুই তোর যন্ত্রণাকে সুরের মাধ্যমে প্রকাশ কর।"
কৌস্তুভ ফেলতে পারেনি বুদ্ধর কথা। সে হাতে তুলে
নেয় কলম। গান লিখতে শুরু করে এবং নিজেই তাতে সুর ক'রে গাইতে থাকে সেই গান। অল্পদিনেই
তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী!
আজ সে স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী। সে তার ক্লার্কের
চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি সঙ্গীত সাধনায় মগ্ন। তার জীবনে অয়ন্তিকাও এসেছে একরাশ
আলো ছড়িয়ে। সে নতুন ক'রে শুরু করতে চায় তার জীবন রামধনু-স্বপ্নে!
কবিতা সামন্ত
পরনে ময়লা একটা ছেঁড়া হাপ প্যান্ট
হাড় জিরজিরে উসকো খুসকো মাথার চুল গায়ে কতদিন যে তেল সাবান পড়েনি তার ঠিক নেই এমন ঘনা
অন্যের উনুনের ওঠা ধোঁয়া দেখে মুখের শুকিয়ে আসা লালাটুকুর ঢোঁক গিলে হাতে একটি সরু
কঞ্চি নিয়ে চলে যাচ্ছে আর নিজের পেটে একবার হাত বুলিয়ে রাস্তার পাশের কল থেকে জল খেয়ে
কোন রকমে হাত দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে ঘরের দিকে চলেছে।
ঘনার মুখ থেকে একটাও শব্দ বের হয়না। ঘনার বাবা কথা দেয় যে এরপর থেকে সে আর কোন নেশা করবেনা,এবার থেকে রোজ তাদের ঘরে উনুন জ্বলবে। ঘনা বলে তুমি সত্যি বলছো বাবা? নেশাখোর দিনুটা অন্ধকারের পথ ছেড়ে আলোয় ফেরার প্রতিজ্ঞা করছে।
শিশিরকুমার সামন্ত
সকালে নিজের দোকানে বসে আপন মনে কাজ
করে যাচ্ছিল সেলিম। বড় রাস্তার পাশে ইঁটের দেয়াল দেওয়া একটা ঘরে, সেলিমের এই ছোট্ট
সারাই-এর দোকান।এই দোকানে সেলিম দীর্ঘদিন পুরোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সারাই-এর কাজ
করে আসছে। এবছর গরমটা বেশি পড়েছে,তাই বোধহয় ফ্যান সারানোর কাজটা বেশি পড়েছে।
বহুদিন বাদে দোকানে এক স্কুল জীবনের
বন্ধু এসেছে। দুজনে চা খেতে খেতে কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথাও চলছিল।
বছর কুড়ি বাইশের একটি ছেলে দোকানে
আসে, হাতে একটা বহু পুরোনো দিনের ফ্যান, ছেলেটি সেলিম কে ফ্যানটি সারানোর কথা বলতেই।
সেলিম ফ্যানটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া
করতে করতে বলে,-বহু পুরোনো দিনের ফ্যান, অনেক যন্ত্রাংশ হয়তো নাও পাওয়া যেতে পারে,
তবু চেষ্টা করে দেখবো, তুমি রেখে যাও।
ছেলেটি বলল,-কত খরচ পাতি পড়বে ?
সেলিম ফ্যান থেকে চোখ না সরিয়ে বলল,-
হাজার টাকা ধরে রাখ।
-হাজার টাকা, ছেলেটি থ মেরে দাঁড়িয়ে
থাকে।
ওপাশ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে, সেলিম
চোখ তুলে ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটি তখন ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কিছুক্ষণ পর ছেলেটি
ধীরে ধীরে বলে -আটশো টাকা হবে না।
সেলিম মাথা নাড়ে।
কথা হয় পরের দিন ছেলেটি এসে ফ্যানটা
নিয়ে যাবে।
সেলিম এর পাশে বসে থাকা বন্ধুটি এতক্ষণ
চুপচাপ বসে ছিল, ছেলেটি চলে যেতেই, বন্ধুটি বলল।-ওই ফ্যানটা সারাই করে তোর কোন লাভ
হবে না।
সেলিম অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর দিল -কেন?
ছেলেটি ভীষণ গরীব, ওর আটশো টাকা দেওয়ার
মতো ক্ষমতা নেই।
-কেন , তুমি কি ছেলেটিকে চেন ?
চিনবো না কেন, আমাদের ওই দিকে বস্তির
একটা ছোট্ট ঘরে মা আর ছেলে থাকে।
তাই।
-বাপটা ওর ছোট বেলায় মারা গেছে।মা-টা
খেটে খেটে কিছুদিন হলো অসুস্থ, একেবারে বিছানা শয্যা।
-তারপর।
-ছেলেটা বড় রাস্তায় রিক্সা টেনে
দু চার টাকা যা পায়, তাতে মা বেটার কোনরকম কষ্টে চলে যায়।ও তোকে এত টাকা দিবে কি
করে।
-তাহলে।
-সত্যি ছেলেটি খুব গরীব। ইদানিং যা
গরম পড়েছে, ডাক্তার বলেছে ওর মা কে ঠান্ডা ঘরে রাখতে,তাই বোধহয় ঐ খারাপ হয়ে থাকা
বহুদিনের পুরোনো ফ্যানটা সারাতে এনেছে।
কিন্তু।,,,,,,,।
* * *
পরের দিন সকালে যথারীতি ছেলেটি দোকানে
এল।
-দাদা আমার ফ্যানটা হয়েছে?
ছেলেটিকে দেখে হাতের কাজ ফেলে এগিয়ে
আসে সেলিম। ছেলেটির দিকে ভালো করে তাকায়। এই বয়সে খেটে খেটে শরীরটা ভেঙে গেছে,পরনে সামান্য একটা লুঙ্গি, আর
একটা ফতুয়া, যেটা আবার কাঁধের কাছে অনেক টা ছিঁড়ে গেছে।কোমরে একটা ময়লা গামছা জড়ানো।সকাল
থেকে বোধহয় পেটে কিছু পড়েনি।
সেলিম ছেলেটির দিকে একটা টুল এগিয়ে
দিয়ে, দোকানের ছেলেটিকে চা বিস্কুট আনতে বলে।
এগিয়ে দেওয়া টুলটাতে বসতে বসতে ছেলেটি
বল,-দাদা ফ্যানটা কি হয়েছে, আমার মায়ের ভীষণ অসুখ, ফ্যানটা না হলে।
সেলিম একটা চেয়ার টেনে নিয়ে ছেলেটির
মুখোমুখি বসে,-না ভাই, তোমার ফ্যানটা সারাতে পারলাম না।
-কেন ?
-বহু দিনের পুরাতন ফ্যান তো খুলতে
গিয়ে ভেঙে গেল।
-ভেঙ্গে গেছে। তাহলে আমার মায়ের কি
হবে। ডাক্তার বাবু বলেছেন। ছেলেটির চোখের কোণে জল চিকচিক করছে।
সেলিম শান্ত গলায় বলে।-তোমার মায়ের
খুব অসুখ। তাই না -।
-হ্যাঁ ।
ডাক্তার বাবু বলেছেন,মা কে ঠান্ডা
ঘরে রাখতে।
-হ্যাঁ ।
-যা । এই নতুন ফ্যান টা নিয়ে যা।
বলেই সেলিম একটা নতুন ফ্যান ছেলেটির দিকে এগিয়ে দেয়।
-এ তো নতুন ফ্যান। দাদা এতো টাকা তো
আমার নেই।
-আমি তোমার ফ্যানটা ভেঙেছি ,তাই এটা
দিলাম, তাছাড়া তোমার মা অসুস্থ।
-এটা আমার মায়ের জন্যে। খুশিতে ছেলেটির
চোখ দুটো চকচক করে ওঠে।
সেলিমের কালি মাখা হাত দুটো ছেলেটির দু কাঁধের উপর এসে পড়ে। -ধুর পাগলা। মা আবার তোর আমার কি। মা তো মা-ই ।
আলোয় ফেরা
অদিতি সেনগুপ্ত
শহরের এক চিলতে আকাশে রাত নেমেছে। অফিস বিল্ডিংয়ের কাচের দেওয়ালে হাজারটা লাইটের প্রতিচ্ছবিতে এখনও দিনের আলোর ঔজ্জ্বল্য। এতো আলো এত মানুষের মাঝে থেকেও মনের গহীন থেকে একাকীত্ব ঘোঁচেনা স্নিগ্ধার। এইতো বছর দুই আগের কথা, দীপাবলীর রাতে দৌড়ে বাড়ি ফিরত ও। আজ যেন সবটাই স্মৃতি! এখন ওর চারপাশে শুধু কর্পোরেট জগতের চাপা হতাশা, কম্পিউটার স্ক্রিনের নীল আলো আর, সোশ্যাল মিডিয়ায় মেকি হাসি। অন্তরমহলে চাপ চাপ মনখারাপি মেঘের বাস! হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে জীবনের নানান বাঁকের বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সুখী থাকার প্রাণপণ অভিনয়। মেচেদা থেকে ‘নিজের মত’ বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে এই শহরে আসা স্নিগ্ধা, এখন জানে এই আলো ঝলমলে শহর আসলে এক শূন্যতার উপন্যাস। এসব ভাবনার মাঝেই মুঠোফোনে মায়ের মেসেজ... “দু’বছর হলো গ্রামের কালি পুজোতে বাড়ি আসিস না! চলে আয় না মা! এই চোদ্দ প্রদীপ তোকে নিয়ে জ্বালাতে না পারলে মনটা বড় ভার হয়ে যায় রে!”
সিন করে রেখে দেয় মেসেজটা স্নিগ্ধা! জানালার বাইরে চোখ ফেলে দেখে গাড়ির লাইটের রেখা ছুটে যাচ্ছে। মনে পড়ে বাবার বলা কথাগুলো, “মনে রাখিস মিতুন, দীপাবলি মানে শুধু এই ঝলমলে আলোকসজ্জা নয়, ভিতরের অন্ধকারকেও আলোয় ফেরানো!" মনটা বড্ড ভার হয়ে আসে। গলার কাছটায় কি যেন দলা পাকিয়ে ওঠে। ফোনটা তুলে দ্রুত টাইপ করে,
“আমি আসছি, মা।”
শিল্পী প্রিয়তমা বসু
সুদামকৃষ্ণ মন্ডল
তিন মাস আগে থেকেই দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার মাইকে প্রচার। দীপাবলীর পরের রাতে প্রিয়তমা বসু গান গাইবে স্থানীয় নেতাজি সংঘের মাঠে । তারপরে নট্ট কোম্পানির যাত্রা পালা। সে সুকৌতুক শিল্পী ও একাধারে ভালো লোকসংগীত শিল্পী। টিকিট সব বিক্রি হয়ে গেছে । অগ্রিম বুকিং বাবদ টাকা নেওয়া হয়েছিল । সময় মতো স্বামী- স্ত্রী -অর্কেস্ট্রা স্টাফ মিলিয়ে রওনা দিয়েছে । তিনটি গাড়ির একটিতে ড্রাইভ করেছিল প্রিয়তমার স্বামী সুনির্মল। সামনে গাড়ীতে ছিল সে । পিছনে পরে পরে ওরা । সামনে একটি পুলিশ জীপ হেলমেটহীন বাইকের আরোহীকে ফাইন নিতে বাঁকের কাছে এসে পড়াতেই নিজেদের বাঁচাতে ক্যালভাটে সজোরে মারল । সবাই রেহাই পেলেও সুনির্মল স্পট ডেথ । নিজেদের দোষ আড়াল করতেই তড়িঘড়ি পুলিশ বডি মর্গে নিয়ে গেল আর গাড়িটা থানায়। প্রিয়তমা ভেঙে পড়ল কান্নায় । ওর বাবা-মাকে ফোনে জানাল । বাবা ফোনে বললেন , তুমি শিল্পী । শো যদি না করো আয়োজক কমিটি সহ পাবলিক তোমাকে কি বলবে ? যাও তবে নিজের মনের কথা কাউকে বুঝতে দিও না ।
এসে দেখল মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ। তার আসার
খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত দর্শক জনতা । কৌতুকে দর্শক
শ্রোতা সাধারণের মন জয় করে গাইল কুড়িটিরও বেশি গান । শেষাবধি কেউ বুঝতে পারল না তার
সারা জীবনের সঙ্গী কিছুক্ষণ আগেই চোখের সামনে থেকে চিরতরে
হারিয়ে গেছে । এখন থেকে সে একা। সে থাকলেই সঞ্চালনা করত। ডুয়েট গানে গলা মেলাতে
পারত । তবুও সে এখন গানের মাঝে হাসি আর কথায়
ভরিয়ে দিল । বাইট দিল । অটো দিল ।
মঞ্চ থেকে নেমে আসার সময় সুনির্মলের কথাগুলো মনে ভাসছে --"তুমি শিল্পী মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য তোমাকে
অর্থ বিনিয়োগ করে আনিয়েছে । ফলে সাধারণের কথা ভাবতে হবে আগেই নিজের কথা পরে ।
চোখে জল-- মুখে হাসি-- বুকের গভীরে ব্যথা-- গর্ভে
তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা !
লীন
গুরুপদ মুখোপাধ্যায়
পুকুরে ঢিল ছু্ঁড়লে
ভাঙা ঢেউগুলি সারিবদ্ধভাবে
প্রচ্ছদ হয়ে ফিরে আসে তীরে
ক্লান্ত বট ঘুমিয়ে পড়ে বিষন্ন ছায়ায়...
যত্নে সাজানো কোরকে সূর্যমুখী
সাজিয়ে রাখা প্রত্ন সকালে
ফুলের পালক খসে গেলে
উলঙ্গ হয়ে যায় সিংহদ্বার...
নীলের গরলে আচ্ছন্ন গোধূলি...
তবুও অপেক্ষা
একটি বার্তার
দীপের হৃৎপিণ্ডে শুয়ে থাকা বিরহ
নীরবতা জাগে নীলের বিথারে...
মৃদু আলোয় জাগে
চারটি তারা নয়, চারটি আকাশ....
ফেরা
অর্ণব সামন্ত
তার কাছে ফিরি
যেন পূর্ব জন্ম পেরিয়ে এই জন্মে।
কিংবা এই জন্ম ছাড়িয়ে পুনর্জন্মে
।
বদল বদল ঘটে ভেতরে বাইরে
কিছু অভিমান অনুযোগ অভিযোগ লেগেই থাকে
সব মেনে সব আঘাত সহ্য করে
আবহমান সুরে গাঁথা শিউলি সাদা ভাতের
গেরস্থালি
আর ফেলো না শিশির অশ্রু পদ্মবুকে
ঐ দ্যাখো সারেঙ্গীটা বাজছে সমস্ত সংস্কার
ভেঙে
ঐ দ্যাখো নদীটি ছলাৎছল শব্দে এগোচ্ছে
নৈঃশব্দের
হাওয়ায় দোয়েলের শিস, ক্যাসুরিনার
পাগলামি
ঐ দ্যাখো সমুদ্রও বেশি উৎসুক মোহনার
সাক্ষাৎকারে
জলের গভীরে ঘূর্ণিজল একই থাকে
বদল বিন্যাসে রূপে খিদে খেদ কখনোই
মেটে না
জীবন এগিয়ে যায় জীবনের চেয়েও বেশি
জীবনের দিকে !
আলোয়-ফেরা
দেবব্রত দত্ত
অন্ধকার, কোনো মুখ নেই, শুধু দাগ হয়ে
থাকে,
ঘড়ির কাঁটাও থেমে গেছে ক্ষত, ভালোবাসি
তাকে।
হঠাৎ আলো, না রোদ নয়, ভাঙা-কাচ কণা
চাই,
ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া আলো এসো, প্রদীপ
বাঁচাই।
ফিরে আসা মানে কি! অর্ধেক তার ভরে
ওঠা বুক,
অর্ধ-মৃত পাখির ডানায় আলোর লেখা থাকুক।
আলোয়-ফেরা তো অন্তহীন ক্ষয় কি দূরে
সরছে!
চোখে জমে থাকা অশ্রুজল হিরের মতো জ্বলছে।
স্মৃতিতে অন্ধকারের ক্ষত, বলো আমি
কেন কাঁদি!
তবুও আলো আড়াল খোঁজে, কান্না মুদ্রণপ্রমাদই।
আলোয় ফেরা
মতিলাল দাস
রাত নেমে এসেছে নিঃশব্দে,
জানালায় একটিমাত্র প্রদীপ জ্বলে
ছোট আলো তবু অন্ধকার ভাঙার সাহস।
দীপাবলি মানে শুধু উৎসব নয়
ফিরে দেখা নিজের ভিতরটাকে।
প্রত্যেকে চায় একটু আলো একটু নতুন
শুরু।
ধোঁয়ার গন্ধে মিশে থাকে পুরনো দিনের
ক্লান্তি
তবু প্রদীপের শিখা বলে সব শেষ নয়।
অন্ধকার শুধু ভয় নয় সেও শেখায় অপেক্ষা।
আজ শহরের প্রতিটি জানালায় জ্বলে মনুষ্যতার
শিখা।
ফিরে আসা মানে পুরোনোকে নয়
বরং নতুনের দিকে এক নীরব পদক্ষেপ।
প্রদীপ জ্বলে মন জ্বলে
আলোয় ফেরা মানে আবার বাঁচার প্রতিশ্রুতি।
আলোয় ফেরা
সুমিতা মুখোপাধ্যায়
শিশুর নয়নপথে বাতায়ন হয়ে
খুলে যাই প্রতিদিন সহজ বিশ্বাসে।
সূর্যের সাতটি ঘোড়া দেখি ভেসে আসে
নিরালোক প্রশ্নময় সরল বাতাসে।
বিস্ময়কুসুম জাগে, আবার ঘুমায়।
'একটি সবুজ পাতা শুধু অন্ধকারে
কোন্ পথে বেঁকে যায়,কোথায় হারায়!'
এই প্রশ্নচিহ্ন রেখে আমার দুয়ারে
আলোর প্রতিমা নিঃশব্দে চলে যায়,
কেবল নীরব
দু 'খানি চরণ
আবহমান চলার ছন্দে
ফুটে ওঠে আলোকিত আলোয় ফেরা স্পন্দনে।
আলোর আগমনী
প্রেয়সী ঘাঁটা
পৃথিবীর বুকে ভরে আছে শত শত অসুর-দানব,
অন্ধকারে ঢেকে গেছে মানব জীবনের সব।
সেই ঘোর তমসা ঘোঁচাতে মর্তে এলেন অসুরদলনী,
ত্রিনয়নী মা আসছেন, হাতে ন্যায়ের
ধ্বজপতাকা ধনী।
পৃথিবী জুড়ে অমাবস্যার গভীর আঁধার,
চারিদিকে ছড়িয়ে আছে বিষাদের ভার।
দীপাবলীর আলো জ্বালাও পৃথিবীর বুকে,
দুঃখ-অন্ধকার দূর হোক আলোর সুখে।
ঘরে ঘরে দীপের শিখা জ্বালুক আশার আলো,
অসুরদের বিনাশ হবে, মুছে যাবে কালো।
তারপর সুখের আলো জ্বলবে চারিদিক,
মায়ের আগমনে হোক পৃথিবী ঐশ্বরিক।
এপার থেকে ওপার
জাহাঙ্গীর মিদ্দে
একটা উচ্চিংড়িও আঁধারে আসক্ত নয়,
দৃষ্টি পড়লেই লাফাতে লাফাতে
আলোয় ফেরে।
অন্ধকার এক ঘোর অস্বাভাবিক পরিবেশ
অক্সিজেনের থেকে অস্বস্তি যেখানে অঢেল,
কার প্রিয় হতে পারে অন্ধকার,
আলোয় ফিরতে চায় সবাই। জীব থেকে কীট,
পতঙ্গের ওড়াউড়ি সবই আলোয়।
আলোময় জীবন সুখের সারাৎসার। ভাসমান
নৌকার মত সবারই ইচ্ছা ঢেউয়ের উচ্ছলতায়
এপার থেকে ওপার, পারাপারের।
আলোয় ফেরা
নবকুমার মাইতি
জগতের শান্তি ও কল্যাণ কামনায় উপবিষ্ট
তথাগত
শতাব্দীর সূচিভেদ্য অন্ধকার গ্রাস
করে নাগরিক সভ্যতা
ঘুনপোকা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, স্থানুবৎ স্থিতধি সমাজ
উৎসব আজ তাণ্ডবের বিভীষিকা,কলুষিত
পূজার মন্ত্র
পথ নেই,পথের সন্ধান নেই, নিস্ফলা মেদিনী
ওগো করাল বদনা মহাকাল রুপ কালি
আমাদের পথ দেখাও অসীম অনন্ত মহাশূন্যের
দিকে
স্বাতী নক্ষত্রের আলোয় আমাদের উজ্জীবন
হোক
মানবের হৃদয় মন্দিরে প্রতিষ্ঠা হোক
গৌরব ও স্বাভিমানের
ঐহিকের সমবেত প্রার্থনা -ভালোবাসা
মানবতা শান্তি.....
নিজের কাছে
পবিত্রকুমার ভক্তা
মানুষের হৃদয় কখনো কখনো অন্ধকারে
,
যেখানে শব্দ নেই, শুধু দীর্ঘশ্বাসের
ছায়া,
ভেতরের ভাঙা দরজা, ভাঙাচোরা স্বপ্ন,
সব মিলিয়ে নিভে যায় আশা.... ব্যর্থ
ভালোবাসা
তবু এক ক্ষীণ প্রদীপ জ্বলে, নীরব বাঁকে
অন্ধকারের কোণে নিজের পথ আঁকে।
প্রদীপের আলোতে দেখি মুখগুলো—
ভুল, দুঃখ, আর নিজের সীমারেখা
দীপাবলি মানে শুধু ঘর আলোকিত নয়,
অন্তরের অন্ধকারকেও স্পর্শ করা।
আলোর নরম দোলা শেখায়, ভালোবাসা শুরু
আর মানুষ ফিরে আসে নিজের কাছে, জীবন
আলোয়।
শিহরণ
নিমাই মাইতি
সে কাছে এসে ছায়া হয়ে বসলো
তার চুলে বিলি কেটে দিতে
সে আরও বড় হয়ে সামনে দাঁড়ালো।
সকাল থেকে হাঁটতে হাঁটতে
ঠিক দুপুরে এসে বসতেই
সে কোলের ভেতর লুকিয়ে গেল।
তখন শিরদাঁড়া বেয়ে ঘাম ফুটছে
জোনাকির মত।
কৃষ্ণাংশু মাকুড়
লাবণ্য ছুঁতে চেয়েছি
কোথায় নামালে আমাকে?
এতো দুয়োরানীর সংসার নয়!
তোমার বিশ্বস্ত গৃহকোণে উদাসী আঁচল
পাতা
সাঁঝবাতির রূপকথা বিছানো বুটিক
বাউলের আলপনা তোমার চোখে মুখে
ছড়িয়ে পড়া অপরূপ জ্যোতি
মলিন ছায়ায় জোনাক জ্বলা আলো
মরজগতের সঞ্জীবনী সুধা, বিশল্যকরণী
সুখ ভেসে বেড়াচ্ছে ইট কাঠ পাথর মাটিতে
আমাকে শিখিয়ে দাও অবগাহণ স্নান
যেন গভীরতর আলোয় ভেসে থাকি আমরণ...
শুভক্ষণ
খুকু ভূঞ্যা
একটা কালো মেঘ গলা পর্যন্ত উঠে এসেছে
শুধু চারদিক নয় ,নিজেকে নিয়েও বিভ্রান্ত
-
এরপর কী হয়?
যদি ছায়ার পাঁজর ভেঙে পালাতে না পারি
মৃত্যুকে সতীন করে পাশাপাশি শোয়া
কীভাবে জানব আমার পথ আর কতদূর --
চোখ মেলে দেখি
ফুল ফুটেছে,পাখিগন্ধে মুখরিত চারপাশ
পুকুরঘাট থেকে কেউ বলছে
আজ দীপাবলি, নিজেকে জ্বালার শুভক্ষণ
সারা ঘরে দীপ জ্বালছে ঈশান সোহিনী
সুমনা–
এসো, মিলনের গান গাই
সৌমিত্র মজুমদার
আঁধারের মলিনতা ঘুচিয়ে দিয়ে এলো দেখো
উজ্জ্বল সেই আলোর দিন,
অমাবস্যার নিকষ কালো মুছে দিতে উদ্যত
আলোকময় দীপাবলি ;
চারপাশ অজস্র আলোর মালায় উদ্ভাসিত
বৈদ্যুতিক আলো, প্রদীপ এবং নানান মোমবাতি
সাজিয়ে রেখেছে আমাদের,
অভাব, অনটন, হিংসা, বিবাদ ভুলে
এসো সবাই হাতে হাত রেখে
বেঁধে বেঁধে থাকি !
অশান্তির অক্টোপাশে আর মোটে আত্মাহুতি
নয়
চেয়ে দ্যাখো আলোয় ফেরার সময় সমাগত
অতীতের যাবত ব্যথা, বেদনাকে বিদায়
জানিয়ে
এসো সবাই মিলে ভালোবাসার গান গাই।
আলোয় ফেরা
সৌগত কান্ডার
সেদিন যখন ঘুমটা ভেঙ্গে গেল রাত তখন
অনেক ।
খোলা জানালার ফ্রেমে জমাট অন্ধকারে
আঁকা চরাচর।
সারা বিশ্ব যেন নিষ্প্রাণ, নিস্তব্ধ,
নিষ্কম্প এক নো ম্যানস ল্যান্ড !
সেই তীক্ষ্ণতায় প্রাণটা ছটফট করে উঠলো
- এক ফোঁটা বিশুদ্ধ আলোর জন্য।
না মোবাইলের আলো বা এল ই ডি আলোর পারুষ্য
নয় -
মন চাইছিল আকাশ থেকে গড়িয়ে পড়ুক সেই
স্বপ্নাভ আলো,
যে ছুঁয়ে দেবে আমার প্রাণ, প্ৰিয় নারীর
স্পর্শের কাতরতায়।
ঠিক করলাম রাত জাগবো সেই মুহূর্তের
অপেক্ষায় -
যখন সে কোনো উদ্ভাসিত নিশিপুষ্পের
প্রাগৈতিহাসিক সুগন্ধর মত ছড়িয়ে পড়বে,
এই ক্রন্দসীর নীরব কথামালায়।
আলো
সুরজিৎ গুছাইত
শহর জুড়ে আলোর মেলা
আনন্দে কাটুক দিনরাত,
মুছে যাবে দুঃখ যত
কপালেতে তোমার হাত।
রংমশালে জ্বলুক আলো
ফুলঝুরিতে ভাল থেকো,
বুকের মধ্যে ভালোবাসার
আগুনটাকে জিইয়ে রেখো।
আলো আঁধারের মাঝে এলে
ভরসা তুমি শুকতারা,
কবিতা লিখে ফানুস ওড়াও
তোমাতে আমি বাঁধনহারা।
দীপাবলি
তপন মুখার্জি
শারদ শেষে অমা -আঁধার
অবস্থাটা করুণ,
আলোয় ফিরতে দীপাবলি
তাইতো বাজায় ধুন।
নিজের রূপে জ্বেলে আলো
আসেন কালী মর্তে,
আলোর পরব দীপাবলি
তাঁর পায়ে দেয় হত্যে।
আসেন কালী খড়্গহাতে
শিষ্টকে দিতে বরাভয়,
আঁধার নিধন ঠিক হয়ে যায়
হয় যে অসুর বিজয়।
প্রেম ও যুদ্ধ
গোবিন্দ বারিক
তিনি ঝুঁকে-ঝুঁকে হাঁটেন
কার্তিকের পাকা ধানের মত
সোনালী ধান আলে বসলে
পরম যত্নে পথ করে দেন
ভোরের ছায়া মাখা শরীর
ধর্ম মানে না, দেশ মানে না
খেসারি খেতের ভেতর উবু হলে
প্রেম ও যুদ্ধের কাহিনী জড়ো হয়
অমাবস্যার চাঁদ বিলাপ গাইলে
চোখের তারায় দীপাবলি হয়
মা নিশূতি রাতের জোনাকি
ইমন রাগের শস্যদানা
সঞ্জীবন রায়
ছুঁড়ে দিচ্ছি যা কিছু বিভ্রান্তিকর
কালো,বহতা স্রোতে
ছুঁড়ে দিচ্ছি সমস্ত গোপন বিষণ্ণতা
,অমাবস্যার রাতে
ছুঁড়ে দিলাম অসংযত আসক্তি আর অন্ধতা
যা ছিল।
স্থির প্রতিজ্ঞার অস্পষ্ট বিন্দুগুলো,যেন
অযুত হিম কনা
স্থির কাম্য সত্য, ভাসমান ...দলছুট
জোনাকির মতো ,
ফের খুঁজে নিতে চাইছে ঠিক পথ,আজ আর
হারবে না।
যে সত্তা জন্মাবধি জানি, তাকে একবার
ফেরাক জননী
যে সত্তা আঁধারে ঢেকেছিল, কঠিন যুদ্ধে
হেরে গিয়েছিল,
অবোধ সেই অজ্ঞতাগুলি অঞ্জলী দিলাম
তোমার পায়ে।
ফিরিয়ে দাও দিব্য জ্যোতি , যে বিভায়
ছুঁতে পারি পট,
আঁকা আছে যেখানে আলোয় ফেরার দিকনির্দেশিকা...
কোন নৈঋতে হবে যেত,থেমে না থেমে, ডাইনে
না বাঁয়ে।
আলোয় ফেরা
নীলোৎপল জানা
অন্ধকার ভেদ করে হাঁটছিলাম,
পায়ের শব্দ কেবল নিজের সঙ্গী।
চারদিকের নিস্তব্ধতা যেন বুকের ভেতর
পাথর চেপে রেখেছিল।
কোথাও আলো নেই, নেই পথের দিশা,
শুধু দমবন্ধ করা নিস্তব্ধতা।
তবুও ভেতরে এক ক্ষীণ শ্বাস বলেছিল—
'এখনও শেষ হয়নি যাত্রা'।
হঠাৎ দূরে টিমটিমে প্রদীপের মতো
এক ঝলক আলো চোখে এলো।
মনে হল, এ আলো শুধু বাইরের নয়,
আমার অন্তরের অন্ধকারও ভেদ করছে।
পথের কাঁটা গলে গেল নরম ঘাসে,
হৃদয়ের শুষ্কতা জেগে উঠল শিশিরে।
আমি থেমে গেলাম না—
আলো ডেকে নিল আরও কাছে।
অবশেষে বুঝলাম—
আলো মানে কেবল সূর্যোদয় নয়,
আলো মানে ভাঙা বিশ্বাসের পুনর্জন্ম,
আলো মানে নিজের ভেতর ফেরার সাহস।
তখনই আমি সত্যিই ফিরলাম—
আলোয় ফেরা মানে জীবনে ফেরা।
0 মন্তব্যসমূহ