মাসিক সাহিত্যপত্র
প্রথম
প্রকাশ ১ বৈশাখ ১৪২৭ কবিমাস-২০২০
সম্পাদক
– নীলোৎপল জানা, তেরোপেখিয়া, মহিষাদল
=======================================================
প্রথম সংখ্যা এপ্রিল ২০২০ মূল্য- ৩ টাকা
========================================================================
সম্পাদকীয়---
সব কাজে লাভ ক্ষতি
দেখলে চলে না। হিসেব করে এগোতে গিয়ে সব সময় যে হিসেব মেলে তাও নয়,তবু চলতে হয়। জীবনে
চলতে গিয়ে কত মণি-মাণিক্য, নুড়ি কুড়াতে হয় তা পথ চলা মানুষ মাত্রেই জানা। তেমনি ‘দুই
পাতা’ পত্রিকাটি আমার কাছে মণি-মাণিক্যের মতো।
অনিত্য জীবনে সামান্য সঞ্চয় সকলকে আনন্দ দিক;
এই প্রত্যাশায় থাকলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------
পারাপার
মৃণালকান্তি দাস
আকাশ ছিল জানলা খুলে,
নদীও একা, নিজের ভুলে-
করিনি পারাপার ।
অন্ধকারে পাঠক তুমি,
পেলে না খুঁজে চারণভূমি
বাংলা কবিতার ?
নীচু
নিরঞ্জন মিশ্র
বৃহত্তম, বৃহত্তম বলে
আজ তুমি যা ঘোষণা কর
কাল তার ঠিক বিপরীত—
আরো বড়ো আরো বড়ো আছে কিছু।
হাত বাড়ালে আঙুল ছুঁয়ে যাবে আকাশ
এ ধরণা প্রমাণিত হল ভুল
যেদিন তোমার মাথা হল নীচু ।
আমার আমিকে বলি
হরপ্রসাদ সাহু
না যদি সইতে পারো তবে কেন এতদিন
কবিতা আশ্রয় করে জীবন কাটাতে চেয়েছিলে!
তার চেয়ে বরং ‘মহান শিক্ষক’হবে
কিংবা ‘বানিজ্যে বসতি লক্ষ্মী’দের পূজো করে
সচ্ছল সময় ভরে নিতে হাতের মুঠোয়!
না যদি সইতে পারো এই সামান্য অসুখ,তবে কেন
বইয়ের ভিতর মুখ গুঁজে ছিলে এতদিন
আজ তুমি দুঃখ পেয়েছ যতটা আনন্দ কী পাওনি ততটা!
শরীরী ঘ্রাণ
আবু রাইহান
অলস মধ্যাহ্ন যাপনে উদাসীন মন
স্মৃতিতে ভাসে তোমার আকণ্ঠ চুম্বন
মিলনের আকাঙ্ক্ষায়, কাতর উচাটন প্রাণ
স্পর্শের অনুভবী কল্পনায় জাগে শরীরী ঘ্রাণ!
হায় করোনা ভাইরাস
তুমি এখন চুম্বনের ত্রাস!
বেহালা পাখি
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
চাওয়া ও পাওয়ার মাঝে একটা
পাখি থাকে,
হলুদ বেহালা পাখি
যে কেবল উড়ে বেড়ায় আকাশের
পঙক্তিমালায়
নীল ডানায় মাখে নিঃশব্দ
প্রহরে রোদের তাপ
আমি কেবল শীতল বাতাস
অথবা বৃষ্টিবনের
শব্দ
সুখসুখ নদী শরীরে পীড়ন
আঁকতে থাকে এঁটেল মাটি
ভেঙ্গে দেয় পাড়, ঢুকে পড়ে বোধন, ঈশ্বরী..
শুধু আমার
সৌমেন সাউ
আমি তোমার ধর্মচক্র ঘোরাতে পারিনি
শুধু হাঁটতে হাঁটতে দরজা জানলাগুলি খুলে দিয়েছি
আর কুয়াশার ভিতর ঘুমিয়ে থাকাঅক্ষরগুলিকে তুলে এনে
শাল গাছের ফুলে ও পাতায় বসিয়ে দিয়েছি।
আমি অনেক কিছু পারিনি
লাল মেপল পাতার উপর ঝরে পড়া বৃষ্টিফোঁটায়
সাষ্টাঙ্গ হতে গিয়ে দেখি
এই রাত শুধু আমার আমাকে নিয়েই ভরে থাক
ঋক
মনোতোষ আচার্য
"নশ্বর এ
পৃথিবীর বুকে তবু রেখে যাবো হাতের স্বাক্ষর"
কবির সাজানো বাড়ি... ফলকে
খোদিত মহাকাল
সাধন কালের আলো পথ ভুলে
মিশেছিল জারুল ছায়ায়
চারিদিকে কাব্য-ঋক আমি করি
নীরব প্রণতি
দেখা তো চোখের নয়
অন্তরের আলো জ্বালি
প্রমত্ত ফাগুনে
হারানো গানের সুরে তোমাকেই
ছুঁতে যাই
তাল-মাত্রা গুনে
পড়ন্ত রোদ্দুর এসে খুলে
দেয় জানালার খিল
ঋষির মুখাবয়বে মিশে আছে
অনন্ত নিখিল
এখানে পরম শান্তি মুক্তির
বার্তা নিয়ে ফুটে আছে ফুল
ঈশ্বর মাথা নুয়ে খুঁটে নেন
শব্দ-তণ্ডুল...
মাপ
নীলোৎপল জানা
ভালোবাসা কতটা হলে কাছে আসা যায় !
কতটা কষ্ট পেলে জীবন দেওয়া যায় !
এসবের কী কোনো মাপ হয় ?
বুঝবে, হৃদয় আছে যার ---
মুক্তি
কেশব মেট্যা
সেদিন বাতাসে গন্ধ ছিল
গন্ধে স্বপ্ন ছিল
স্বপ্নে রঙ ছিল
রঙে অবগাহন ছিল
অবগাহনে মুক্তি ছিল...
মুক্তির পর আর কী থাকে
নাথ!
এ জীবন
দুরন্ত বিজলী
ভেসে যাচ্ছে সময়
বদলে বদলে
ডাইনোসর থেকে
এখন মানুষ কথা বলে না
মুখোশ কথা বলে
অন্তর দর্শন
পারভিন বানু
জীবনে তখন প্রবল ঝড়ো বাতাস
। চারিদিকে সুনসান ।
একটি সমতল জায়গার অনবশ্বনে
ছোট্ট চড়াই
সেই জায়গার নাম অন্তর।
যেখানে পুনদর্শনের একটা
আয়না লাগানো আছে।
যেখানে নিজেকে অবরুদ্ধ
করা যায়
আবার উন্মুক্ত ও।
যার চাবি বোধের কাছে
সুরক্ষিত ।
যাকে আমি নীল মাধ্ব বলে
ডাকি।
সে আমার বোধ আমার ভালোবাসা
আমার স্বদেশ আমার
স্বাভিমান।
যাকে আমি সব অপকর্ম থেকে
রক্ষা করি ।
নির্বিকার
বিশ্বজিৎ মাইতি
তার জন্য অপেক্ষা করে বেশ
নিশ্চিন্তের।
ভাবে থাকি
বিড়ালকে কিছু বলি না,
ইঁদুরকেও কিছু বলিনা,
বিড়াল যখন ইঁদুর ধরার জন্য
নিঃশব্দে থাবা পেতে রাখে
গর্তের সামনে
আমি তখন গর্তের মুখ হয়ে
নির্বিকার চেয়ে থাকি,
ইঁদুর যখন মাটি কেটে গর্ত
বানায়
আমি তখন গর্তের মাটি হয়ে
ঝুর ঝুর ভেঙে পরই নির্বিকার।।
----------------------------------------------------------------------------------------------------
লেখা পাঠাবার Mail id : nilotpaljana1978@outlook.com
0 মন্তব্যসমূহ